আসানসোল কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের কোন্দল প্রকাশ্যে
টিএমসিপির আন্দোলনের বিরোধিতা, প্রশ্ন তুলে পাল্টা আন্দোলনে তৃনমুল শিক্ষা বন্ধু সমিতি
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত* : আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে গত সোমবার থেকে অর্থাৎ সাতদিন ধরে ধর্ণা বিক্ষোভ করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের এই আন্দোলনের মুল দাবি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা আদালতে মামলায় খরচ করা। এই অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের চেম্বারে তালা দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য ডাঃ দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে না এলেও, রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার এসেছিলেন। কিন্তু তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এবার তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতি গত ৭ দিন ধরে চলা টিএমসিপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুললো। এদিন সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টা ধর্ণায় বিক্ষোভে বসেন।
স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষাঙ্গনে আবারও শাসক দলের দুই সংগঠনের মতবিরোধ ও গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এলো।
শিক্ষা বন্ধু সমিতির যুগ্ম সচিব দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, এখানে কিছু বহিরাগতদের নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বহিরাগতদেরকে দিয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের চেম্বারে তালা লাগানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আন্দোলনকারীরা রেজিস্ট্রার ও মহিলা ফিনান্স অফিসার বা এফওর হামলা ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের তরফে ভালো কাজ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন ভর্তি চলছে। এই সময় আন্দোলনের নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যেভাবে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে তা কোনো ছাত্র পরিষদের কাজ হতে পারে না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররা তৃণমূলের সাথে যুক্ত হতে পারেন। তবে কোন অন্যায় সহ্য করবো না বা সমর্থন করবো না। এই বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী মলয় ঘটকের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। তাকে কেউ কেউ নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। তা আমরা মানবো না। গোটা বিষয়টি প্রশাসনের
বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদেরকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদের অবশ্যই আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু কোন অধিকারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের চেম্বারে তালা লাগানো হবে? যতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থাকবে, ততদিন আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন চলবে বলে এদিন দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
দলের অন্য একটি সংগঠনের প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলনে কেউ যদি সমর্থন করে, তাহলে তাকে বহিরাগত বলা হচ্ছে? এ ছাড়া উনি বহিরাগত বলার কে? কারা বহিরাগত ও তারা কিসের জন্য আন্দোলন করছে, তা আসানসোলের মানুষেরা বিচার করবেন। কোনো অবৈধ দাবিকে সমর্থন করছে না আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। তারা শুধু জানতে চায় তাদের দেওয়া ফি কিভাবে খরচ করা যায় আদালতে মামলার খরচে। উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের চেম্বারে লাগানো তালার চাবি ফেরত দেওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। মামলার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কত টাকা খরচ হয়েছে সে বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন কতদিন চলবে বলে জানান তিনি। আর যারা আন্দোলন করছেন সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়া হয় না। সেটা অন্য ভবনে হয়। তাই এই আন্দোলনের কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আধিকারিক ও কর্মচারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন অভিযোগও অভিনব মুখোপাধ্যায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা কথা বলতে চাই শুধু ভাইস চ্যান্সেলর বা উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সংগঠনের কোন কর্মী বা নেতা, কোন আধিকারিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার প্রশ্নই উঠে না।
তবে এদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি উপাচার্য ডাঃ দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়। ফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা যাওয়ায়, এদিনের টিএমসিপির আন্দোলন ও তার পাল্টা শিক্ষা বন্ধু সমিতির পাল্টা আন্দোলন নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।