পাঁচটা কারখানা গিলে ফেলল একটা আস্ত নদী
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, জামুড়িয়া : একটা নয় দুটো নয় একেবারে পাঁচ – পাঁচটা, কল কারখানা যেন গিলে দিয়েছে একটা আস্ত নদী। আর দুদিনের প্রবল বর্ষণে, দীর্ঘ দিন ধরে লুকোনো থাকা সমস্যা, নতুন করে গ্রামবাসীদের কাছে ফুটে ওঠায়, আবারো গ্রামবাসীরা এলাকায়, দূষিত, বিষাক্ত নদের জল জলমগ্ন হয়ে সর্বত্র ডুবিয়ে দেওয়ায়, ও সেই দূষিত জল, বাড়ি ঘরে ঢুকে, শ্মশানকে ডুবিয়ে দেওয়ায় ও ঐতিহ্যবাহী বামদেবের সাধনা স্থল ডুবে যাওয়ায় ও সেই অংশ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ায়,সে সকল বিষয়ে, প্রতিকার চেয়ে সিঙ্গারন নদকে পুনরায় সেই অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে, জামুরিয়ার ইকরা শিল্প তালুকের পাঁচটি কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখিয়ে তাদের এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া সিঙ্গারন নদ সংস্কারের দাবি তোলে। একইভাবে সেখানেই এক বেসরকারি কারখানা এ ডি ডি এর তৈরি রাস্তা দখল করে, মানুষজনেদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে, কারখানা চালাচ্ছে, বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে সরব হন।
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/05/img-20240520-wa01481045365085360283686-500x428.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/09/img-20240909-wa00806721733580827251668.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/12/fb_img_17339279922403722767543487143310-476x500.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/08/img-20240803-wa01996823500377864110031-500x281.jpg)
উল্লেখ্য গত দুদিন থেকে একনাগাড়ে প্রবল বর্ষণের কারণে, প্রায় এক দেড় দশক আগে, জামুরিয়ার ইকরা অঞ্চল দিয়ে বয়ে যেত, যে প্রায় একশ ফুট চওড়া শিঙ্গারন নদ, তা অতিবৃষ্টি জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে আর তার জেরেই ওই নদ সংলগ্ন অংশে থাকা পাঁচটি লৌহ আকরিকের কারখানার দীর্ঘদিন ধরে ফেলা দূষিত আবর্জনা যুক্ত জল এ দিনের প্রবল বর্ষণে উপচে পড়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এমনই বেগতিক হয় যে ইকরার ঐতিহাসিক স্থল শ্মশান কালী মন্দির যে মন্দিরে একসময় বামদেব অর্থাৎ কিনা বামাখ্যাপা গিয়ে তপস্যা করতেন সেই তপস্যার স্থল ও শ্মশানের বিস্তীর্ণ অংশ, কালী মন্দির সবই এই জলের তলায় ডুবে যায়। এর পাশাপাশি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ইকরা থেকে জামুরিয়া যাওয়ার রাস্তা। যার জেরে প্রায় কয়েক কিলোমিটার ঘুরপথের রাস্তা দিয়ে যেতে হয় এলাকাবাসীকে না তার সাথে দূষিত বর্জ্য পদার্থ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিঘার পর বিঘা জমি। স্থানীয়রা জানান এক সময় এই সিঙ্গার নদের জল পান করত অনেকে, একের পর এক অসংখ্য গ্রামের বাসিন্দারা নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য এই জলকে কাজে লাগাতো অথচ গত দেড় দশক ধরে, ক্রমাগত দূষণের জেরে, নদের জল পান করা তো দূরের ব্যাপার, সে জল কোন ব্যবহারেও লাগে না। আর বর্ষা এলেই প্রকাশ পায় এই নদের প্রকৃত চেহারা।
স্থানীয়দের দাবি পূর্বে এই সিঙ্গারন নদ প্রায় এ ১০০ ফুট চওড়া ছিল পাশাপাশি এখানে দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদ অন্ডাল হয়ে দামোদর এ গিয়ে মিশতো কিন্তু আজ সব জনতা অতীত বেশ কয়েকটি কলকারখানা নিজেদের স্বার্থের জন্য এই সিঙ্গার নদ কে ঘিরে নিজেদের সীমানার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে। এদিন সুপার স্মেল্টাস নামে এক কারখানার গেটের কাছে গিয়ে দেখে অবাক হতে হল, যে কারখানা ভেতর দিয়ে বয়ে আসছে সিঙ্গারন নদ, আর সেই নদকে একেবারে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখে নিকাশী নালার মতো করে বের করে দেওয়া হয়েছে ফ্যাক্টরির ধার বরাবর দিয়ে, একই রূপ ভাবে বেশ কয়েকটি কলকারখানা এই নদের গতিপথ পাল্টে দিয়ে মর্জি মাফিক নদ কে পরিচালিত করেছে কোথাও ১০ ফুট কোথাও ১২ ফুট চওড়া নদের সীমানা রেখে, নির্দিষ্ট একটা সীমানা বেঁধে দিয়ে দূষিত আবর্জনায় ভরিয়ে তোলা হচ্ছে নদকে অনেকাংশে সরকারি জমি দখল করে নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ, যা নিয়ে তারা বারংবার অভিযোগ জানিয়ে কোন সমাধান সূত্র না বের হওয়ায় এবার তারা অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে, জেলাশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে ধরনায় বসবেন বলেই হুঁশিয়ারি দেন।
যদিও এ বিষয়ে কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেদের কোন মতামত জানানি। এ বিষয়ে জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং এর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি ওপর মহলে জানানো হয়েছে বলেই জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি জামুড়িয়ার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক। তিনি ক্যামেরার বাইরে শুধু জানিয়েছেন যে, বিষয়টিকে নিয়ে তিনি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন, জেলাশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে এত বড় একটা সিঙ্গারন নদ, কিভাবে সকলের চোখের সামনে, নালায় পরিণত হল, কেনই বা, তা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরে এলো না। কেনই বা পরিবেশবিদরা এরূপভাবে এক নদের গতিপথ বদলে দেওয়া, ও তাকে সম্পূর্ণভাবে দূষিত করার জন্য কোন পদক্ষেপ কেন নিলেন না। সে সকল নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন। এখন দেখার আগামীতে এই নদকে পুনরায় তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন।