ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন দিয়ে নদী পারাপার

বর্ষার বৃষ্টি ও ডিভিসির জল ছাড়ায় ভেসেছে দামোদরের অস্থায়ী সেতু


বেঙ্গল মিরর, বার্ণপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* একটানা বর্ষার বৃষ্টি সঙ্গে মাইথন থেকে ডিভিসির জলছাড়া। দুইয়ে মিলে বেড়েছে দামোদর নদীর জল। এরফলে ভেসেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্ণপুরে নেহেরু ( ল্যামিয়ার) পার্ক সংলগ্ন দামোদরে থাকা অস্থায়ী বাঁশের সেতু। না সেতু থাকায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মুখে পুরুলিয়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সহ বার্ণপুরের কয়েক হাজার মানুষ। তবে দামোদর লাগোয়া এই দুই জেলার মানুষেরা শুধু নন, আশপাশের জেলা এমনকি কলকাতা ও হাওড়ার অনেকেই কম সময়ে পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য দামোদরের এই অস্থায়ী সেতু ব্যবহার করে থাকেন। গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে সেই সেতু ভেসে যাওয়ায় তারাও বিপাকে পড়েছেন। যারা এই সেতু দিয়ে দামোদর নদী পারাপার করতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন, যারা দৈনিক দিনমজুরি করেন বা সবজি সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে রুটি রোজগার করেন।


এখন এইসব মানুষদেরকে ১১ কিলোমিটারের রাস্তা ঘুরপথে কুলটির ডিসেরগড় হয়ে আসতে হচ্ছে। যার জন্যে ৪২ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। নয়তো রানিগঞ্জ হয়ে আসতে গেলে ৬০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হবে। যা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এতোটা ঘুরপথ একদিকে সময়সাপেক্ষ ও অন্যদিকে ব্যয়বহুলও।  তাই বাধ্য হয়ে দামোদরের উপরে রেললাইন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার করে আসতে হচ্ছে।
গত তিনদিন ধরে এমনই ছবি দেখা গেলো বার্ণপুরে দামোদর নদীতে গিয়ে।

সোমবার যাদব ঠাকুর নামে এক ব্যক্তি বলেন,  বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে কিছু নিয়ে আসানসোলে আনতে নদী পার করে আসতে ১১ কিলোমিটার রাস্তা পার করতে হতো।  কিন্তু সেতু ভেসে যাওয়ায় ঘুরপথে ডিসেরগড় দিয়ে ৪২ কিলোমিটার ও রানিগঞ্জ দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এর ফলে জিনিসের দাম বেড়ে যায়। আবার যারা কারখানায় কাজ করে তাদের অনেক ভোরে বেরোতে হচ্ছে। নদীর নৌকা ভরসা হলেও নৌকা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলে। নদীর উপর অস্থায়ী সেতু বর্ষার সময় ভেঙে যায়। আবার সেই অস্থায়ী সেতু তৈরী করা হয় চারমাস পরে। ততদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে। তিনি বলেন, এরই মাঝে একজন সাইকেল করে রেললাইন পার হবার সময় রেললাইনে আটকে গিয়ে পা কেটে গেছিল।


তাই নদীর দুই দুই পারের বাসিন্দাদের দাবি নদীর উপর একটা স্থায়ী সেতু তৈরী করা হোক। যাতে সব সমস্যার সমাধান হয়। এতে দুই পারের ব্যবসায়ী,  চাকুরীজীবিদের থেকে সাধারণ মানুষের কিছুটা সুরাহা হবে। তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার করতে হবে না।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এদিন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে ঐ ট্রেন চলাচলের রেল ব্রিজ পরিদর্শনে গেছিলাম। পিলারের অবস্থা খারাপ তা নিজের চোখে দেখে এসেছি। তারপর গত সপ্তাহে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে নেহেরু পার্কের পেছনে দামোদর নদী পারাপারের অস্থায়ী সেতু ভেসে গেছে। আমি কলকাতায় বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে এসে গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বেনন্দ সোনেয়ালের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন।

সোমবার বিধানসভার অধিবেশন শেষ হলো। চেষ্টা করছি এই সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার। আমি অনেক মানুষের সমস্যা হচ্ছে।
প্রসঙ্গতঃ, ডঃ মনমোহন সিং ইউপিএ সরকারের আমলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাশ পাসোয়ায় এই বার্ণপুরে এসে দামোদর নদীতে একটি ব্রিজ তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ঠিক করা হয়েছিলো রেল ও সেইল যৌথ ভাবে ব্রিজ করবে। কিন্তু তারপর এক দশকের বেশি সময় পার হয়েছে। দামোদর দিয়ে অনেক জল বয়েছে, কিন্তু ব্রিজ আজও হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *