ASANSOL

আসানসোলে বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল, জিটি রোড অবরোধ,  কুশপুত্তলিকা দাহ

বেঙ্গল মিরর  আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ  আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে  আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার ডাকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
জিটি রোডের আসানসোল পুরনিগম মোড় থেকে শুরু হয়ে সেই মিছিল হটন রোড মোড পর্যন্ত আসে। সেখানে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান অগ্নিমিত্রা পাল, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির রাজ্য ট্রেড সেলের কো-কনভেনার সুব্রত ওরফে মিঠু ঘাঁটি সহ আসানসোল বিজেপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।  তাদের হাতে ছিলো বিচারের দাবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যানার।


এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে অগ্নিমিত্রা পাল বলেন,
এদিন দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তাতে আমরা খুশি। বিজেপি এই ঘটনায় দায় নিয়ে এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে। রাজ্য সরকার ও ঐ হাসপাতালে প্রথম থেকেই এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছিলো। যেখানে ঐ চিকিৎসকের দেহ অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বেরোচ্ছিলো। এমনকী তার যৌনাঙ্গ থেকেও রক্ত ঝড়ছিলো বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তারা মানতে চাননি যে, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে এই ধরনের ক্ষেত্রে মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু কলকাতা পুলিশ রাতেই শেষকৃত্য করেছে। এই সব দেখে সবার মনে হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রভাবশালীদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে খবর তৃণমূলের একজন প্রভাবশালী সাংসদের আত্মীয়  জড়িত রয়েছে। বিজেপি বিধায়কের দাবি, এই ঘটনার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগ করতে হবে।


এদিন বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপির নেতা ও কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। প্রায় এক ঘন্টার মতো বিজেপির এই অবরোধ বিক্ষোভ চলে। বিজেপির এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাতে কোন গন্ডগোল না হয়, তারজন্য প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো।
অবরোধ বিক্ষোভে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় জিটি রোডের হটন রোড মোড় সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশ সেইসব গাড়িকে পুলিশ অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়।

সুপারের কাছে নিরাপত্তার দাবি, আসানসোল জেলা হাসপাতালে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, ফুল দিলেন চিকিৎসক ও নার্সদের

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তার সঙ্গে ছিলেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ রায়, প্রশান্ত চক্রবর্তী সহ বিপুল সংখ্যায় বিজেপি কর্মী ও সমর্থকেরা। তিনি আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করেন। পাশাপাশি তিনি এমারজেন্সি বিভাগ, আউটডোর ও ওয়ার্ডে ঘুরে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতে ফুল দিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।


তিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের বিষয়ে জেলা হাসপাতালে কর্মরত মহিলা ডাক্তার, অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তার দাবি জানান। বিজেপি বিধায়ক আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপারের সাথে দেখা করে বলেন, কলকাতায় ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত।


পরে, তিনি বলেন, আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক নেই। এই হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে তার মধ্যে ঝামেলা নিয়ে কাজ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এখানে ঘটার সম্ভাবনা যে নেই তা কে বলতে পারে। তাই আমি এদিন সুপারের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের কথা ভেবে আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বরে বহিরাগতদের  আনাগোনা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যে মহিলা ডাক্তার বা অন্য মহিলা কর্মচারীরা নাইট ডিউটি করেন, তাদের জন্য কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কলকাতায় যা ঘটেছে তা আসানসোলে যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন,  আসানসোল জেলা হাসপাতাল আমার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। তবে আমাকে রাখা হয়নি আসানসোল জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতিতে। এই বিধানসভার বিধায়ক না হয়েও মন্ত্রী মলয় ঘটককে থাকতেই পারেন রোগী কল্যান সমিতিতে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আসানসোল জেলা হাসপাতাল আমার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, তাই আমাকে রোগী কল্যাণ কমিটিতেও রাখা উচিত। তবে তৃনমুল কংগ্রে প্রতিটি বিষয়ে রাজনীতি করে, সে কারণেই আমাকে রাখা হয়নি। শুধু আসানসোল জেলা হাসপাতাল নয়, একই চিত্র রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে।

আপনি যদি তৃণমূল কংগ্রেসের একজন ছোট নেতাও হন, তবে আপনি যে কোনও সময় জেলা হাসপাতালে ঢুকতে। তাকে চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মীরা আটকাতে পারবেন না। কেননা, তাদের একটা নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপার। আছে  সাথে লড়াই করছে তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অগ্নিমিত্রা পাল এদিন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের সতর্ক করে বলেন, যাতে কলকাতার ঘটনা এখানে না ঘটে তার দিকে নজর রাখতে হবে।
বিজেপি বিধায়কের পরিদর্শন প্রসঙ্গে সুপার বলেন, উনি আমার সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু দাবি করেছেন। আমি তাকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *