তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : অমৃতনগর কোলিয়ারিতে কয়লা খনিতে কর্মরত 9 জন খনি কর্মী, ও নিরাপত্তা রক্ষীকে, মারধরের অভিযোগে এবার অভিযোগ দায়ের হল, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে এই যে, তৃণমূল পরিচালিত রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি তাঁর কর্মস্থল, ই সি এল এর অমৃতনগর কোলিয়ারিতে আধিকারিকদের উপর হামলা চালিয়ে, নিগ্রহ করার সাথেই ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় । গত কয়েকদিন আগেই তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি, তথা শ্রমিক সংগঠনের নেতা বিষ্ণুদেব নুনিয়ার বিরুদ্ধে কাজোড়ায় এলাকায়, কোলিয়ারির দপ্তরে পৌঁছে এক কর্মীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসে ।
আর এবার ইসিএল এর কুনুস্তোড়িয়া এরিয়ার, অমৃতনগর কোলিয়ারিতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়, আরো একবার শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে উঠল প্রশ্ন। জানা গিয়েছে , এক অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থার ভিজিলেন্স দপ্তর, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ও অমৃতনগর কোলিয়ারির কর্মী, মোহাম্মদ সাবিরের বিরুদ্ধে চাকরিতে নিয়োগের সময় জমা দেওয়া, তাঁর জন্মগত শংসাপত্রকে সন্দেহজনক বলে মনে করে, এপেক্স মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শারিরিক পরীক্ষা করে, তাঁর জন্মের দিন নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় । সাবিরের বাবাও পূর্বে এই কোলিয়ারিতে কাজ করতেন । তাঁর বাবার সার্ভিস রেকর্ডে সাবিরের জন্ম তারিখ 1965 সাল লেখা আছে । পরে তার বাবার মৃত্যুর পর সাবির 2003 সালে, পোষ্য হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন ।
সে সময় তিনি নিজেকে ঝাড়খণ্ডের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নথি জমা দিয়েছিলেন, বলে জানা গেছে। সেই বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী ( admit কার্ড ) 1975 সালে তাঁর জন্ম হয়। যদিও তদন্তে নেমে দেখা যায় রানিগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন বলে জানতে পারা গেছে। আর সেই বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী তাঁর জন্ম 1979 সাল । আর এ সকলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভিজিলেন্স দপ্তর থেকে তার শারিরিক পরীক্ষার পর সাবিরের জন্মের সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । সেই মত নির্দেশিকাও জারি হয়। পরে বছরখানেক আগে সাবির কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । যদিও কলকাতা হাইকোর্ট প্রথমে ইসিএল এর নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করে । পরে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট সাবিরের শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে, জন্ম নির্ধারণের নির্দেশ বাতিলের আরজি খারিজ করে । এরপর সাবির ডিভিশন বেঞ্চে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানায় । ডিভিশন বেঞ্চ, সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় কে বহাল রাখে ।
এক আধিকারিক জানান , হাইকোর্টে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংস্থার পক্ষ থেকে সাবিরকে পাঁচবার কেন শারীরিক পরীক্ষা করাবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয় । যদিও তারপরও তিনি সেই নোটিশ নিতে চাননি বলে অভিযোগ । এবার বুধবার সকালে সাবির কাজে যোগ দিতে গেলে তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয় না ।আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে শখানেক অনুগামীকে নিয়ে কার্যালয়ে হামলা চালান,সাবির বলেই অভিযোগ । জানা গেছে ওই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে পাঁচ জন খনি কর্মীও ছিল। অমৃতনগর কোলিয়ারির এজেন্ট, উমেশ পণ্ডিত রানীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বলেই জানা যায়। যেখানে তিনি, পার্সোনাল ম্যানেজার , ম্যানেজার , ও সুরক্ষা আধিকারিক সহ 9 জন আধিকারিককে কলার ধরা , ধাক্কা মারা, সহ নানাভাবে নিগ্রহ করা হয় বলেই অভিযোগ করেন । তাতে এমনও দাবি করা হয় যে তাদের আগামীতে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় । এর জেরে আধিকারিক ও অন্যান্য কর্মীরা
আতঙ্কিত রয়েছেন বলে জানা গেছে । তারা এই ঘটনার তদন্ত করে, গ্রেফতারের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ।
এক আধিকারিক জানান , সাবির তাদের জানিয়েছেন কোনভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে না কেউ । আর তাঁকে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । নাহলে আধিকারিকরা কাজ করতে পারবেন না বলেই হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
যদিও এ বিষয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে, সাবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনরূপভাবে তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।