বাঁধ বাঁচাতে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ালো ডিভিআরআরসি
বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই , দামোদর – বরাকর উপত্যকায় রেকর্ড বৃষ্টি
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ বাংলা ও ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া দামোদর – বরাকর উপত্যকা এলাকা বা ক্যাচমেন্ট এরিয়ার বলতে গেলে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। এই বৃষ্টি শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। আর এই বৃষ্টির কারণে প্রচুর পরিমাণে জল জমছে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার বা বাঁধে। বলতে গেলে এই দুই বাঁধের জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। তাই বাধ্য হয়ে এই দুই বাঁধকে বাঁচাতে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত তিন দফায় ২ থেকে ২.৫০ লক্ষ কিউসেকের মধ্যে জল ছাড়তে বাধ্য হলো দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিশন বা ডিভিআরআরসি।
যদিও, অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ডিভিআরআরসির কাছে সোমবার রাতে আবেদন করে বলা হয়েছিলো, জল ছাড়ার পরিমাণ না বাড়াতে। সেই মতো সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ছটা পর্যন্ত জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ায়নি ডিভিআরআরসি। কিন্তু, দামোদর – বরাকর উপত্যকা এলাকায় সোমবার রাতেও প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার সকালেও তা হয়েছে। যে কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া পরিমাণ এদিন অনেকটাই বাড়ানো। সোমবার রাতে এই দুই জলাধার মিলিয়ে ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ ডিভিআরআরসি জানায় মাইথন থেকে ২ লক্ষ ও পাঞ্চেত থেকে ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সকাল এগারোটার সময় মাইথন থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
একইভাবে সন্ধ্যে ছটার সময় ৩০ হাজার কিউসেক কমিয়ে ২ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। যার মধ্যে মাইথন থেকে ৯০ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যা পরিস্থিতি, তাতে ডিভিআরআরসি মনে করছে, মঙ্গলবার রাতেও এই পরিমাণে জল ছাড়তে হবে।
এই প্রসঙ্গে এদিন সন্ধ্যায় ডিভিআরআরসির সদস্য সচিব শশী রাকেশ বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। বরাকর – দামোদর উপত্যকায় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাই এই পরিমান জল ছাড়তে আমরা বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো বলেন, সোমবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাদেরকে অনুরোধ করেছিলো জল ছাড়ার পরিমাণ না বাড়াতে। তাই আমরা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বাড়ায়নি।
কিন্তু তারপরে আর সম্ভব হয়নি। মাইথনে জল ধরে রাখার ক্ষমতা ৪৯৫ ফুট। সেই জায়গায় মঙ্গলবার দুপুরে জলস্তর চলে আসে ৪৯৪.২৪ ফুটে। একইভাবে পাঞ্চেতের জল ধরে রাখার ক্ষমতা ৪২৫ ফুট। এদিন এখানে জলস্তর ছিলো ৪২৫.২৫ ফুটে। আমাদের লক্ষ এই জলস্তরকে মাইথনে ৪৯১ ও পাঞ্চেতে ৪২১ ফুটে নিয়ে আসা। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামী ৫ দিন যদি এইভাবে বৃষ্টি না হয়, তবে জল ছাড়ার পরিমাণ ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হবে।
অন্যদিকে, ডিভিসির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আঞ্জনি কুমার দুবে বলেন, আমরা ডিভিআরআরসির নির্দেশ মতো জল ছাড়ি। এক্ষেত্রেও তাই করা হচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে আসানসোল শহর তথা শিল্পাঞ্চলে বৃষ্টি হয়নি। আকাশ পরিষ্কার হয়ে চারদিন পরে রোদের দেখা মিলেছে। শুক্রবার থেকে সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এই আসানসোলে।