রানিগঞ্জে শেয়ার ট্রেডিংয়ের নামে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
তদন্তে আসানসোল সাইবার থানার পুলিশ , প্রতারণার শিকার রানিগঞ্জের বাসিন্দা
বেঙ্গল মিরর, রানিগঞ্জ ও আসানসোল রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ সাইবার থানা সক্রিয় রয়েছে। তারপরেও আসানসোল দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে নানা উপায়ে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষেরা। হাতিয়ে নেওয়া বা আত্মসাৎ করে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এবার শেয়ার ট্রেডিং বা কেনাবেচার করতে গিয়ে এক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার এনএসবি রোডের বাসিন্দা নিধি কেডিয়া। তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ২৯ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে দিন কয়েক আগে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল সাইবার থানায় নিধি কেডিয়া লিখিত ভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে সাইবার থানার পুলিশ বিএনএসের ( ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) ৩১৯(২), ৩১৮(৪), ৩১৬ (২) ও ৬১(২) নং ধারায় একটি মামলা ( কেস নং ৮০/২৪) করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ এই চক্রের কোন খোঁজ পায়নি।
জানা গেছে, চলতি বছরে ৭ জুন রানিগঞ্জের বাসিন্দা নিধি কেডিয়ার কাছে একটি অঞ্জাত বা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিলো। সেই ফোনে তাকে বলা হয়েছিলো, তারা শেয়ার ট্রেডিং বা কেনাবেচা করার কোম্পানি। তিনি এই ব্যাপারে ইন্টারেস্ট বা টাকা বিনিয়োগ করতে। নিধি কেডিয়া প্রথমে এই ব্যাপারে বিশেষ কোন আগ্রহী দেখাননি। এরপর তার কাছে একাধিকবার ফোন আসে, তাতে গোটা বিষয়টি তাকে আবারও বোঝানো হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হন। তখন তাকে একটি গ্রুপের সঙ্গে ইনক্লুড বা যুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই গ্রুপে বেশ কিছুদিন থাকার পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, এতে অনেকেই মোটা টাকা লগ্নি করছেন। বেশ ভালো লাভ বা মুনাফা আছে। এরপর তিনি গত ৪ জুলাই থেকে ৭ আগষ্ট পর্যন্ত পিএনবি বা পাঞ্জাব ন্যাশান্যাল ব্যাঙ্কের রানিগঞ্জ শাখা থেকে ১৭ বার ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ২৯ লক্ষ ২১ হাজার টাকা শেয়ার ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করেন। তারপর সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে যখন কিছুদিন পরে সেখ বিনিয়োগ করা টাকার একটা অংশ ফেরত চান।
তিনি কোম্পানিকে বলেন, টাকা তার দরকার আছে। তাই তাকে তা দেওয়া হোক। কিন্তু তখন তাকে বলা হয় যে, এভাবে টাকা তোলা যাবে না বা রিটার্ন করা যাবে না। তাকে আরো কিছু টাকা লগ্নি করতে হবে। তবে কিছু করা যেতে পারে। তারপর তিনি দেখেন ঐ গ্রুপ নেই ও কোম্পানিরও কোন অস্তিত্ব নেই। পরক্ষণেই নিধি কেডিয়া বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এরপর তিনি আসানসোল সাইবার থানার দ্বারস্থ হন। তিনি বলেন, প্রথমে আমি কিছু বুঝতে পারিনি। পরে কিছু টাকা রিটার্ন চাইতে গিয়ে বুঝতে পারি, পুরোটাই ” ফেক “। গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।
প্রসঙ্গতঃ, চলতি বছরের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৮০ টি সাইবার অপরাধের ঘটন ঘটেছে। নানা ভাবে মানুষেরা টাকা খুইয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আগষ্ট মাসে হওয়া ৮০ টি ঘটনায় ১০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারণা চক্র। তার মধ্যে ৯৫ শতাংশ টাকাই খোয়া গেছে শেয়ার ট্রেডিং করতে গিয়ে। আরো জানা গেছে, গত ৭ বছরে সাইবার অপরাধের ঘটনা কখনো বেড়েছে, আবার কখনো কমেছে। যেমন ২০১৭ সালে ৩২ টি, ২০১৮ সালে ৭ টি, ২০১৯ সালে ১৩ টি, ২০২০ সালে ৩৭ টি, ২০২১ সালে ৬২ টি, ২০২২ সালে ৬২ ও ২০২৩ সালে ৪০ টি সাইবার অপরাধের মধ্যে দিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি, আসানসোল সাইবার থানা আসানসোল দক্ষিণ থানার বরাচক স্টেশন রোডে দুটি ভুয়ো কল সেন্টারের হানা দিয়েছিলো।
অভিযোগ ছিলো এই কল সেন্টার থেকে ইন্টারন্যাশনাল বা আন্তর্জাতিক কল করে টাকা রোজগারের একটি চক্র চলছিলো। দুটি ভুয়ো কল সেন্টার থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ফোন উদ্ধার করা হয়েছিলো।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( হেড কোয়ার্টার) অরবিন্দ কুমার আনন্দ বলেছিলেন, সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের তরফে সাধারণ মানুষদেরকে সবসময় সচেতন করতে প্রচার করে থাকি।