RANIGANJ-JAMURIA

পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলনে দিনভর উত্তাল কেন্দা

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, জামুড়িয়া : দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ উগরে দিয়ে, দিনভর আন্দোলন করে, বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে, খনি অঞ্চলের সবথেকে জ্বলন্ত সমস্যার অন্যতম ধস গ্যাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের জন্য এবার বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ভাবে চালালো তীব্র আন্দোলন। এদিন খনি অঞ্চলের এসসি, এসটি, ওবিসি সম্প্রদায়ের হাজারো হাজার মানুষজনেদের, একি আন্দোলন মঞ্চে একত্রিত করে, দীর্ঘ প্রায় ৩ দশক ধরে অসহায় হয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া দু লক্ষেরও বেশি, মানুষজনেদের দীর্ঘদিনের দাবি, পুনর্বাসন নিয়ে সোচ্চার হল, কেন্দা গ্রাম বাচাও কমিটি থেকে শুরু করে, পশ্চিমবঙ্গ গোয়ালা সমাজ ভূঁইয়া সমাজ উত্থান সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বাউরি সমাজ শিক্ষা সমিতি, বাদ্যকর সমিতি সহ বিভিন্ন গ্রাম রক্ষা কমিটির সদস্যরা এদিন দাবী তুললেন পুনর্বাসনের।

শুক্রবার তারা সকাল ১০ টা থেকে কেনা কোলিয়ারির এজেন্ট কার্যালয় ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়, সেই বিক্ষোভ আন্দোলনের সমর্থনে কেন্দা পুলিশ ফাঁড়ি ময়দান থেকে নিউ কেন্দা হয়ে, এক জনবিক্ষোভ মিছিল এজেন্ট কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে হাজির হয় যা চলে দুপুর দুটো পর্যন্ত। তবে সেই বিক্ষোভ আন্দোলন কে প্রত্যক্ষ করতে কোন আধিকারিক এই দীর্ঘ সময় সেখানে না আসায় হাজারো হাজার বিক্ষোভকারীরা এবার এজেন্ট কার্যালয় থেকে মিছিল করে কেন্দা মোড়ের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। পরে সেই অবরোধ মিছিল এগিয়ে যায়, ইসিএল এর সোনপুর বাজারি এরিয়া কার্যালয়ে। সেখানেই চলে দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ।

পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কেনা গ্রুপ অফ মাইন্সের এজেন্ট পি বিশ্বাস ও কেন্দা এরিয়ার এরিয়া পার্সোনাল ম্যানেজার এ দাশগুপ্ত। বিক্ষোভকারীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে তাদের নেতৃত্ব দেওয়া সদস্যদের লিখিত আকারে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করার জন্য পহেলা অক্টোবর বৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি,এই পুনর্বাসনের সমস্যাটি শুধু কেন্দার নয়। রানীগঞ্জ খনি অঞ্চলের ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের বিভিন্ন অংশে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বেপরোয়া ভাবে কয়লা উত্তোলনের ফলে খনি আইনকে না মানার জন্য খনি অঞ্চলের ২ লক্ষ মানুষ আজ বিপন্ন অবস্থার মধ্যেই বসবাস করছে, যার জ্বলন্ত উদাহরণ কজোড়া এরিয়ার হরিশপুর।  পড়াশকোল গ্রাম, সালানপুর এরিয়ার সামডিহি মুচিপাড়া সহ শাক্তুরিয়া এরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ আজ ধস বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ভীষণভাবে প্রভাবিত। যার জন্য তারা দায়ী করেছেন, বিভিন্ন খনিতে কয়লা স্তরে আগুন লাগার পর, সেই আগুনের লেলিহান শিখা, অনুপ্রবেশ করে, একের পর এক এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ নারায়ণকুড়িগ্রাম হরিশপুর গ্রাম সহ বহু গ্রাম।

কয়লাঞ্চলে এই ধসের ফলে কেন্দা ও সি পি তে খনি ভরাট করার সময় কয়লা খনির অতল গহবরে মাটির তলায় সলিল সমাধি হয়েছে খনির ওভার ম্যানের। আরো উল্লেখযোগ্য ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ২০১০ সালে কাজোড়া এরিয়ার পড়াশকোল নিবাসী, তারক ব্যানার্জি ও তার কন্যার মাটির তলায় চলে যাওয়া। তার সাথে সাথেই সেই গ্রামের বাসিন্দা বাবুন ব্যানার্জি ও তার ছেলে সোমনাথের ও সলিল সমাধি হয় কিছুটা দূরেই একই দিনে দুই পরিবারের চারজন চাপা পড়ে খনির নিচে। সেরকমই জামবাদ ও শিপের পাশে ২০১৭ সালে এক মহিলা ঘর সহ মাটির তলায় চলে যায় তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে দিন কয়েক ব্যস্ততা থাকলেও পরে সমস্তটাই আবার ধামাচাপা হয়ে যায়। জানা গেছে এমনি ভাবে সালানপুর এরিয়ার সামডি মুচি পাড়াতেও খনি ধ্বসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখনো পর্যন্ত কয়লান চলে এরূপভাবে প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে খনিতে ধসের কারণে যার বেশিরভাগটাই এই বসত বাড়িতে বসবাসের সময় ঘটেছে বলেই দাবি বিক্ষোভকারীদের।

উল্লেখ্য কেন্দা গ্রাম বাচাও কমিটির নেতৃত্বে কেন্দা গ্রামকে পুনর্বাসনের দাবিতে দি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল কোর্টে একটি মামলা দায়েরের পর সেই মামলায় বিচারক গ্রামকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। এছাড়াও গ্রামবাসীদের যৌথভাবে ট্রাইবুনাল প্রিন্সিপাল বেঞ্চ নিউ দিল্লিতেও ২০১৭ সালে নির্দেশ দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার। তারপরও দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোন সুরাহা মেলেনি। তাই বারংবার নানান পদ্ধতি অবলম্বনের পরও কোনরূপ কোন সমাধান সূত্র না মেলায় এবার সেই দীর্ঘদিনের চাপা খুব যেন আজ আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরক হয়ে উঠল। বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনে, দীর্ঘক্ষণ ধরে তারা দিকে দিকে বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে, বারংবার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে দেখালো প্রতিবাদ। এখন দেখার এতসব বিক্ষোভ আন্দোলন ও প্রতিবাদের পর কি নির্যাস বেরিয়ে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *