ASANSOL

রোগীর মৃত্যুতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে উত্তেজনা,  চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আরজি কর আবহের মধ্যে ১৮ বছরের এক কিশোর রোগীর মৃত্যুতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তেজনা ছড়ালো আসানসোল জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে দফায় দফায় মৃত রোগীর পরিবারের সদস্যরা আসানসোল জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও সুপারের চেম্বারের সামনে বিক্ষোভ দেখান। আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রাধানগর রোডের বাসিন্দা মৃত রোগীর নাম সুরজ রুইদাস (১৮)। মৃত রোগীর বাবা ভরত রুইদাস সহ পরিবারের সদস্যরা একদফায় সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের সঙ্গে কথা বলেন। তারপরেও পরিবার মৃত কিশোরের ডেথ সার্টিফিকেট নিতে চাননি।

তারা দাবি করেন যে, যে চিকিৎসকের আন্ডারে সুরজ রুইদাস ভর্তি হয়েছিলেন, তাকে এসে কথা বলতে হবে। তারা সুপারকে বলেন, চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। তাই তারা সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে চান, রোগীর কি কারনে মৃত্যু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সুপারের কাছে তারা ময়নাতদন্তের দাবি করেন। সেই মতো সুপার ময়নাতদন্তের করার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে বলেন। এরপর সন্ধ্যা সাতটা ঐ রোগীর চিকিৎসা করা চিকিৎসক ডাঃ সোমনাথ গুপ্ত হাসপাতালে এসে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লিখিত নির্দেশ দেন। সেই মতো তা আসানসোল দক্ষিণ থানায় জানানো হয়।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রাধানগর রোডের বাসিন্দা সুরজ রুইদাসকে সোমবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ অসুস্থ অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন এমারজেন্সি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসককে পরিবারের সদস্যরা বলেন যে, তার ৫ দিন ধরে জ্বর হয়েছিলো। তার সঙ্গে বমি পায়খানা বা লুজ মোশন হচ্ছিলো। সেই মতো সুরজকে ফিজিশিয়ান ডাঃ সোমনাথ গুপ্তর আন্ডারে মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে সেখানে ঐ কিশোরের চিকিৎসা চলছিল। মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন ওয়ার্ডে থাকা এক পিজিটি বা জুনিয়র ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করেন। এরপর তাকে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ড থেকে সিসিইউ বা ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটিকে রেফার বা স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু, ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়ার সময় তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। তখন তাকে আবার ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনা হয়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ এক পিজিটি তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


এরপরই মৃত কিশোরের পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ হাসপাতালে আসে। নিয়ে আসা হয় আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের স্কুটি সওয়ার বিশেষ মহিলা বাহিনীকে। সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুপার কথা বলেন।
মৃত রোগীর বাবা ভরত রুইদাস, মা টিঙ্কু রুইদাস সহ পরিবারের অভিযোগ চিকিৎসায় গাফিলতির কারনে সুরজের মৃত্যু হয়েছে। আমরা চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে তার মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। কিন্তু চিকিৎসক আসেননি ও আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাদের আরো দাবি, সুরজ পেশায় গাড়ি চালক। তার ৫ দিনে জ্বর ছিলো। জ্বর না ছাড়ায় আমরা সোমবার সকালে তাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমরা চিকিৎসকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।


এরইমধ্যে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ সুরজের মৃতদেহ ওয়ার্ড থেকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা হাসপাতালের মর্গে। তা জানার পরে পরিবারের সদস্যরা আবারও পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। তারা জানতে চান, তাদের অনুমতি ছাড়া কি করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ? তারা জানতে চান, মৃতদেহ কোথায়? তখন পুলিশ তাদেরকে বলে, বুধবার দেহর ময়নাতদন্ত হবে। তাই তা মর্গে নিয়ে রাখা হয়েছে। তারা দাবি করেন, মৃতদেহ দেখাতে হবে। তখন পুলিশ রোগীর বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরকে মর্গে নিয়ে গিয়ে দেহ দেখিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
রাত আটটা নাগাদ পরিবারের সদস্যরা আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে আসানসোল দক্ষিণ থানায় যান।
এই প্রসঙ্গে সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস রাতে বলেন, ঐ রোগীর পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে এসে জানতে চান, কি করে তার মৃত্যু হলো? আমি বলি, মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করতে হবে। তখন তারা রাজি হয়। সেই মতো আমি তা পুলিশ ও চিকিৎসককে তা বলি। তিনি আরো বলেন, গাফিলতির অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানান তদন্ত করে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *