ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

বাংলা পক্ষের বিরোধিতা, বাতিল ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান, সমালোচনায় অগ্নিমিত্রা পাল

বেঙ্গল মিরর, জামুড়িয়া ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও চরণ মুখার্জি : টানা কয়েক দিন ধরে বিতর্ক চলছিলো। বিরোধিতায় মাঠে নেমে সরব হয়েছিলো ” বাংলা পক্ষ ” র মতো সংগঠনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে জানানো হলো বাতিল করা হচ্ছে প্রখ্যাত ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান। আগামী ৩ নভেম্বর আসানসোলের জামুরিয়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হরেরাম সিংয়ের বহুলা সার্বজনীন কালি পুজোয় ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের গান করতে আসার কথা ছিলো। আর এর পরেই নতুন করে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় সমালোচনায় সবর হয়েছেন আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি বলেন, একজন শিল্পী তো যে কোন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেন। কিন্তু পবন সিং বাংলায় অনুষ্ঠান করতে পারলেন না। তা বাংলার লজ্জা। যা হলো তা ঠিক হলোনা।


অন্যদিকে, এদিন বাংলা পক্ষের তরফে অক্ষয় বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল আসানসোলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট অফিসে পুলিশ কমিশনারকে একটি স্মারক লিপি জমা দেওয়া হয়। সেই স্মারক লিপিতে সংগঠনের তরফে বেশ কিছু অভিযোগ করা হয়েছে। তাতে পবন সিংয়ের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দেওয়ার জন্য পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। তেমনই জামুড়িয়া শাসক দলের বিধায়ক হরেরাম সিংয়ের ছেলে প্রেমপাল সিংয়ের বেশ কিছু বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে সংগঠনের তরফে। অক্ষয় বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমরা শিল্পীকে নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু তিনি তার গানে বাংলার নারী ও মহিলার উদ্দেশ্যে যা বলেন, তার বিরোধিতা আমরা করছি।


তবে পবন সিংকে নিয়ে আসানসোলে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বিতর্ক তৈরি হলো। এর আগে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিলো। বিজেপি আসানসোল কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হিসেবে এই পবন সিংয়ের নাম ঘোষণা করেছিলো। তারপরই রাজ্যের শাসক দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় থেকে অনেক নেতা পবন সিংয়ের বাংলা ও বাঙালি মহিলাদের নিয়ে তার গান, ভিডিও ও পোষ্টার জনসমক্ষে এনে বিরোধীতায় হন। বাংলার পাশাপাশি দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পবন সিংকে আসানসোলে প্রার্থী করেনি। পবন সিং নিজেও আসানসোলে ভোটে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।
এদিকে, দিন কয়েক আগে আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে প্রচার শুরু হয় যে বহুলা সার্বজনীন কালি পুজোয় ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান করতে আসছেন। পবন সিং নিজেও সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে বহুলায় অনুষ্ঠান করতে আসার কথা জানিয়েছিলেন।
ঘটনাচক্রে এই পুজোর সভাপতি জামুড়িয়ার তৃনমুল কংগ্রেসের বিধায়ক হরেরাম সিং। স্বাভাবিক ভাবেই পবন সিংয়ের আসা নিয়ে নতুন বিতর্ক একটা নতুন মাত্রা পায়। 


জামুড়িয়ার বিধায়ক প্রতিনিধি তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল ছাত্র পরিষদের সম্পাদক বিধায়ক পুত্র প্রেমপাল সিং শনিবার দুপুরে জামুরিয়ায় বিধায়কের অফিসে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে  তিনি বলেন, কালি পূজাকে সামনে রেখে প্রতি বছর বহুলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রতি বছর অনেক বিশিষ্ট শিল্পীদের ডাকা হয়। এবার সেই রকম ভাবে আগামী ৩ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বিখ্যাত ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যা নিয়ে তারা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু  যেখানে পবন সিংয়ের মতো বড় শিল্পীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, সেটি খুবই ছোট।  সেই জায়গায় ভিড়ের কারণে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমরা তা করছি না। প্রেমপাল সিং আরো বলেন, শুধুমাত্র পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান নয়, কালিপূজো সম্পর্কিত সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র কালি পূজো হবে এবং একটি মেলার আয়োজন করা হবে।

এদিন প্রেমপাল সিংয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলা পক্ষ  নামে একটি সংগঠনের তরফের এর  প্রতিবাদ করা হচ্ছে। সেটা কি এই অনুষ্ঠান বাতিলের কারণ? এই প্রসঙ্গে প্রেমপাল সিং বলেন, আমি জানিনা, এই সংগঠন কি এবং কেন এর প্রতিবাদ করা হচ্ছে? পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পবন সিং যে মাঠে আসবেন সেখানে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। সেজন্যই এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে। তার দাবি, বাংলায় হিন্দিভাষীদের প্রতি যে পরিমাণ ভালোবাসা দেওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, তা উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের হিন্দিভাষী অঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া যায় না, তাই হিন্দিভাষী বাঙালি হওয়ায় তার কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই, তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদের বোঝা দরকার এই দেশ ও  বাংলা গঙ্গা-যমুনার ভূমি। এখানে যে ধর্ম বা ভাষাই হোক না কেন সবাই মিলেমিশে বসবাস করেন। ধর্ম বড় কথা নয়, একজন শিল্পীর পরিচয় শুধুমাত্র তার শিল্পকলা। এ অবস্থায় কোনো শিল্পীর বিরোধিতা করা ঠিক নয়। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলার মাটি কাজি নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের।
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে পবন সিংয়ের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *