আসানসোলের বার্ণপুর রোডে স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থার শাখায় ডাকাতির ঘটনায় গ্যাংস্টার ও তার ৫ সঙ্গীকে সনাক্ত ম্যানেজারের
আসানসোল আদালতে বেসরকারি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতির মামলায় সুবোধ সিংয়ের হাজিরা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ সাত বছর আগে ( ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর) আসানসোলের বার্ণপুর রোডে কোর্ট মোড় সংলগ্ন বেসরকারি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থার ( মুথুট) শাখায় ডাকাতির ঘটনা। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিলো বিহারের কুখ্যাত ” গ্যাংস্টার ” সুবোধ সিং ও তার সঙ্গীদের। ডাকাতরা ঐ সংস্থার লকার খুলে নগদ টাকা সহ সোনার গয়না ( প্রায় ১০ কোটি) লুঠ করে নিয়ে যায়।
সোমবার আসানসোল আদালতে এই মামলায় সাক্ষ্যদান করতে এসে ভরা এজলাসে সুবোধ সিং ও তার ৫ সঙ্গীকে চিনতে পেরে সনাক্ত করলেন তৎকালীন ঐ শাখার অপারেশন ম্যানেজার শুভদ্বীপ কোনার। এদিন এজলাসে সুবোধ সিং ও ঠাকুর নবরঙ্গ সিংকে সনাক্ত করেন অপারেশন ম্যানেজার। বাকি চারজনকে তিনি ভিসি বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ও বিহারের বেউর জেলে সনাক্ত করেন। চন্দননগরে অন্য একটি ডাকাতির ঘটনায় সুবোধের দুই সঙ্গী আলিপুর জেলে আছে। বাকি দুজন আছে বিহারের বেউর জেলে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পাওয়া ঠাকুর নবরঙ্গ সিং এদিন সশরীরে আদালতে হাজিরা দেন।
সুবোধ সিংয়ের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন শেখর কুন্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ। সিআইডির তরফে তদন্তকারী অফিসার ছাড়াও কলকাতা থেকে সরকারি আইনজীবী বা পিপি এসেছিলেন।
জানা গেছে, আসানসোল আদালতে বিশেষ বা স্পেশাল কোর্টের বিচারক অরুপ রায়ের এজলাসে বেসরকারি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থার শাখার অপারেশন ম্যানেজারের সাক্ষ্য দান সম্পূর্ণ হয়নি। আগামী ২৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে। সেদিন তিনি আবার সাক্ষ্য দিতে আসবেন।
প্রসঙ্গতঃ, প্রথম দিকে এই ঘটনার তদন্ত করছিলো হিরাপুর থানা ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের বিশেষ দল। পরে এর তদন্তভার যায় রাজ্য পুলিশের সিআইডির হাতে।
এদিন সকালে এই মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য সুবোধ সিংকে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে প্রিজন ভ্যানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আসানসোল আদালতে আনা হয়।
দুপুরের পরে এই ডাকাতির মামলার শুনানি শুরু হয় বিচারক অরুপ রায়ের এজলাসে। সাক্ষ্যদান করতে গিয়ে অপারেশন ম্যানেজার বলেন, আমি অন্যদিন সকাল নটার পরে শাখায় যাই। কিন্তু সেদিন পৌনে নটার সময় আসি। দেখি গেট খোলা। দুজন হেলমেট পড়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকে দেখি আরো চারজন। তারাও হেলমেট পড়েছিলো । একজন গান পয়েন্টে নিয়েছে সুইপার বা ঝাড়ুদারকে। আমাকে দেখেই একজন গান পয়েন্টে নিয়ে লকারের চাবি চায়। সেই চাবি নিয়ে লকার খুলে সব সোনার গয়না ও বেশ কিছু নগদ টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। এরপরই তিনি এজলাসে থাকা সুবোধ সিং ও ঠাকুর নবরঙ্গ সিংকে চিনতে পারেন। পাশাপাশি শুনানির সময় কলকাতা আলিপুর ও বিহারের বেউর জেলে ভিসি করা হয়। দুই জায়গায় দুজন করে মোট চারজনকেও তিনি সনাক্ত করেন। ঘটনার ডাকাতরা যে হেলমেট পড়েছিলো, সেগুলোও এদিন সিআইডি এজলাসে এনেছিলো। ম্যানেজার সেগুলোও সনাক্ত করেন।
প্রসঙ্গতঃ, সেদিন ঘটনা ঘটিয়ে ডাকাতরা শাখার বাইরে রাখা মোটরবাইক করে চম্পট দিয়েছিলো। যা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়।
এদিকে, এদিন সকালে যখন প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে সুবোধ সিংকে কোর্ট লকআপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখন সাংবাদিকরা জানতে চায় সে কিছু বলবে কি না? তার উত্তরে সুবোধ হিন্দিতে বলে, ” আপ লোগ, হামকো দেখকে বোর নেহি হো রাহো ” ( আপনারা আমাকে দেখে বোর হচ্ছেন না)।
অন্যদিকে, এদিন অন্য একটি মামলায় সিজিএম কোর্টে সিআইডির অন্য একটি মামলায় সুবোধ সিং হাজিরা দেয়।