কাঠগড়ায় বার্নপুরের প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, পড়ুয়াদের দিয়ে সাফাই করানো ও বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ, সরব কাউন্সিলর
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ আসানসোল পুরনিগমের ৯৮ নং ওয়ার্ডে বার্নপুরে ধরমপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়াদের কাছ থেকে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বেআইনিভাবে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলো। যারা সেই টাকা দিতে পারেনা সেসব পড়ুয়াদের দিয়ে নিয়মিত স্কুলের বাথরুম পরিষ্কার করানো, ঝাঁটা দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকা অর্চনা কুমারীর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, এইসব নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে বার্নপুরের এই ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে ব্যাপক ঝামেলা চলছে। মোট চারটি অভিযোগ এনে বেশ কয়েকমাস আগে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন স্কুলের একাধিক সহকারী শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
বুধবার এমনই একটি অভিযোগ পেয়ে ৯৮ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর কাহাকাশা রিয়াজ স্কুলে আসেন। তিনি প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে, অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের মধ্যে প্রকাশ্যেই বাদানুবাদ হয়। কাউন্সিলারের সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা দুর্ব্যবহারও করেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, সুমনা সিং নামে এক স্কুল পড়ুয়ার মা এদিন স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষািকার কাছে জানতে চান, কেন মঙ্গলবার তার শিশুকে দিয়ে ঝাঁট দেওয়ানো হয়েছে? অভিযোগ, এরপর তাকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়। এমনকি স্কুল পড়ুয়ার ব্যাগ দেওয়া হচ্ছিল না। পরে হিরাপুর থানার পুলিশ এসে সেই ব্যাগ ঐ শিশুর মায়ের হাতে দেয় বলে জানা গেছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এই স্কুলে ভর্তি থেকে, জামাপ্যান্ট, জুতো দেওয়া, এমনকি সাফাইয়ের জন্য টাকা চাওয়া হয়।
অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকারা একই ধরনের অভিযোগ বিদ্যালয় পরিদর্শক বা স্থানীয় শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এই মিড ডে মিল নিয়ে বিস্তর গরমিল চলছিল গত কয়েক মাস ধরে। সেই গরমিলের সত্যতা খুঁজে পাওয়ার পরে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষিকার হাত থেকে নিয়ে অন্য একজন শিক্ষককে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরও লিখিত অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষিকাই করেছিলেন।
গোটা ঘটনা নিয়ে কাউন্সিলার বলেন, ৯৮ নং ওয়ার্ডে পাঁচটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তারমধ্যে চারটিতে কোনো সমস্যা নেই। সেখানে সব কিছু সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। তবে ধরমপুরের এই স্কুলে মিড-ডে মিল সহ নানা বিষয় নিয়ে সমস্যা সামনে আসছে। অভিযোগ পেয়েছি, নানা অছিলায় পড়ুয়াদের থেকে প্রধান শিক্ষিকা টাকা চান। যাদের মা-বাবা টাকা দিতে পারেন না, সেই সব শিশুকে দিয়ে ঝাড়ু দেওয়ানো ও বাথরুম পরিষ্কার করানো হয়। আমি এদিন জানতে এসেছিলাম। আমার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
কাউন্সিলর আরো বলেন, এটি একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে কোন শিশু ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমি গোটা বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরকে জানিয়েছি।
এই প্রসঙ্গে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ঐ স্কুল নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করছি। গুরুত্ব সহকারে অভিযোগ গুলি দেখা হচ্ছে। স্কুল পড়ুয়াদের থেকে টাকা নেওয়ার কথা নয়। তাও কেন, নেওয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি আপনাকে স্কুল নিয়ে বা এসব অভিযোগ নিয়ে কোন কথা বলবো না। শিক্ষা দপ্তরকে যা বলার বলবো।
তবে স্কুলের সামনে এদিন ওয়ার্ড কাউন্সিলারের সরব হওয়া নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি প্রধান শিক্ষিকার কাছে গোটা বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন টাকা নেওয়া হয়না। এমনকি কোন পড়ুয়াকে দিয়ে কোন ঝাঁট দেওয়া বা সাফাই করানো হয়না। তিনি সাংবাদিকদের স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে পর্যন্ত বলেন।
অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হিরাপুর সার্কেলের এসআই অফ স্কুল এনাক্ষী মিত্র বলেন, মিডিয়ার সাথে এই নিয়ে কোন কিছু বলবো না। তবে যা কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে তার তদন্ত করা হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্ট আমি উচ্চ আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ( শিক্ষা) সঞ্জয় পাল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরেই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি।