West Bengal

পশুবলি নিষিদ্ধে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের : অবশেষে বোল্লা কালী মন্দিরে বলি নিয়ে কাটল জটিলতা

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : প্রায় একপ্রকার অবসান হলো বোল্লা কালী মন্দিরের বলি নিয়ে জটিলতার। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বোল্লা কালী মন্দিরে পশু বলি বন্ধের দাবিতে একটি পশুপ্রেমী সংস্থার পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পিটিশনে উল্লেখ করা হয় যে , প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার পর শুক্রবার থেকে মন্দিরে প্রায় দশ হাজার ছাগল বলি দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই প্রথা সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের অধীনে সুরক্ষিত ‘আবশ্যিক ধর্মীয় চর্চা’ নয় এবং অবিলম্বে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।

আদালতে পিটিশনারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, পশু বলি ধর্মীয় চর্চা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা প্রয়োজনীয় ধর্মীয় প্রথার মধ্যে পড়তে হবে। তবে, পশু বলি বন্ধে পশ্চিমবঙ্গে আইন প্রণয়নের অভাবের কথাও তুলে ধরা হয়। এর বিপরীতে মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয় যে, পশু নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন, ১৯৬০-এর ধারা ২৮-এর অধীনে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে পশু বলি অনুমোদিত।

আদালত জানায়, পশু বলি বন্ধের বিষয়টি শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশে কার্যকর সম্ভব নয়; এ জন্য রাজ্যের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি, পিটিশনে উল্লেখ করা হয় পশু বলির ফলে পরিবেশ দূষণসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছে।

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম নির্দেশ দেন মন্দির কমিটি এবং প্রশাসনের মধ্যে পূর্বে একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে প্রতীকী বলির প্রথা পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঐ শর্ত কঠোরভাবে পালন করতে হবে এবং চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে হলফনামা জমা দিতে হবে।বিষয়টি আরও বিস্তারিত শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে আদালত বলি চত্বরে সিসিটিভি লাগানোর বিষয়টি সহমত না জানালেও বলির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তবে সেই জায়গায় ব্যাপক ভিড় যাতে না হয় এবং এক এক করে বলি যাতে সম্পন্ন হয় তার ব্যবস্হা প্রশাসনকে করতে নির্দেশ দিয়েছে।

মন্দির কমিটির পক্ষে সমর্থন করে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী জানান, ‘ আগামীকালের উৎসবে সবাই মনের ইচ্ছা অনুযায়ী বলি দেওয়ার জন্য জড়ো হবে। আমাদের বলি দেওয়ার অনুমতি রয়েছে, তাই বলি বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি হিন্দু জনসাধারণের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। সারা দেশ থেকে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ এখানে পুজো দিতে এবং পশু বলির সঙ্গে যুক্ত হতে আসেন। মূলত, এটি উত্তরবঙ্গের একটি বড় উৎসব। যেহেতু সমাজে অন্যান্য পশুর কসাইখানা বন্ধ হয়নি, তাই বলি বন্ধ করা জনসাধারণের অনুভূতির বিরুদ্ধে যাবে। এজন্য এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’এদিন ওই মামলায় এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত, সলিসিটার জেনারেল সহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *