RANIGANJ-JAMURIA

মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে আত্মঘাতী কিশোর,  তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেহ, রেখে রানিগঞ্জে কোম্পানির গোডাউনে বিক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও রানিগঞ্জ, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ কর্মক্ষেত্রে ( একটি নামী বেসরকারি কোম্পানির গোডাউন) দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিলো। সেই চুরির দায় চাপানো হয়েছিলো সিকিউরিটি গার্ড বা নিরাপত্তা রক্ষী অন্ডাল থানার বাবুইশোল কলোনির বাসিন্দা বছর ১৬ র কিশোর অভিরুপ প্রসাদের উপর। আর সেই চুরির অপবাদে মানসিক অবসাদে বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলো ঐ কিশোর। শুক্রবারের এই ঘটনার পরে মৃত কিশোরের পরিবারের তরফে পুরো দায় চাপানো হয়েছে গোডাউনের ম্যানেজার রবীন্দ্র সিংয়ের উপরে। এদিন সন্ধ্যায় মৃত কিশোরের কাকা রঞ্জন প্রসাদ গোটা ঘটনার কথা বলে গোডাউন ম্যানেজারের নাম দিয়ে রানিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত চেয়েছেন।


শুক্রবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ঐ কিশোরের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত। এরপর পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিয়ে সোজা পৌঁছে যান রানিগঞ্জ থানার বাঁশরায় ঐ বেসরকারি কোম্পানির গোডাউনে। তারা সেখানে মৃতদেহ রেখে গোটা ঘটনার তদন্ত চেয়ে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান রানিগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার জ্যোতি সিং, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় সহ এলাকার তৃনমুল কংগ্রেসের নেতারা। তারাও গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। পাশাপাশি, তারা কোম্পানির আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। একইসাথে তারা প্রশ্ন তোলেন, ১৬ বছরের এক কিশোরকে দিয়ে কি করে ঐ কোম্পানি গত আড়াই বছর ধরে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করাচ্ছে? খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় রানিগঞ্জ থানার পুলিশ।


     জানা গেছে, অন্ডাল থানা এলাকার বাসিন্দা অভিরূপ প্রসাদ গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে রানিগঞ্জ থানার বাঁশরায় একটি বেসরকারি কোম্পানির গোডাউনে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতো। গত ২৬ নভেম্বরে রাতে ঐ গোডাউনে কাজ করা দুই রাজমিস্ত্রীর দুটি মোবাইল ফোন চুরি যায়। অভিযোগ, সেই চুরির দায় অভিরুপ প্রসাদের উপর চাপিয়ে দেয় ঐ গোডাউনের ম্যানেজার রবীন্দ্র সিং। পরের দিন ২৭ নভেম্বর অভিরুপ বাড়ি চলে যায়। পরে ঐ ম্যানেজার অভিরুপের মাকেও ফোন করে সেই ঘটনার কথা বলে। স্বাভাবিক ভাবেই এই চুরির অপবাদে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে ঐ কিশোর। শুক্রবার সকালে বাড়ির লোকেরা তাকে ঘরের মধ্যে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

স্বাভাবিক ভাবেই গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।      এই প্রসঙ্গে মৃত কিশোরের কাকা রঞ্জন প্রসাদ বলেন, আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে রানিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এই ঘটনার জন্য দায়ী গোডাউনের ম্যানেজার। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করে সত্যটা বার করুক। পাশাপাশি আমরা ক্ষতিপূরণের দাবি করেছি।
এদিকে কাউন্সিলার জ্যোতি সিং বলেন, ঐ কোম্পানি প্রথমে মানতেই চায়নি যে ঐ কিশোর এখানে কাজ করতো। কিন্তু মাসের বেতন দেওয়ার সময় যে ডায়েরিতে, তা লেখা হতো, তা দেখাতেই তারা মেনে নেয়। এরপর যে চুরির কথা বলা হচ্ছে, তার কোন প্রমাণ আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাইনি। তিনি আরো বলেন, অবাক লাগছে, একটা ১৬ বছরের কিশোর আড়াই বছর ধরে ওখানে কাজ করছে। এই বিষয়টা আমরা পরে দেখবো। আগে ঐ কিশোরের পরিবারের ব্যাপারটা আমরা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে, পুলিশ জানায়, অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।


শেষ পর্যন্ত কোম্পানির তরফে মৃত কিশোরের পরিবারকে ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও দেহ সৎকার এবং অন্য কাজের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। এই প্রতিশ্রুতির পরে
রাত আটটার সময় বিক্ষোভ তুলে পরিবারের সদস্যরা দেহ নিয়ে যান বলে জানা গেছে। ঐ কোম্পানির তরফে অবশ্য এই নিয়ে কোন মন্তব্য করা হয় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *