ASANSOL

প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি শিশুরঞ্জন পাল

বেঙ্গল মিরর, কলকাতা, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত:
দীর্ঘ বেশ কয়েকদিনের লড়াই শেষ । চলে গেলেন রাজ্যের  প্রাক্তন আইপিএস শিশুরঞ্জন পাল । প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা প্রাক্তন ডিআইজি আইবি শিশুরঞ্জন পাল। স্বভাবতই শোকস্তব্ধ পুলিশমহল থেকে শুরু করে সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীরা।
বেঙ্গল মিরর নিউজ এর শুভাকাঙ্খী ছিলেন তিনি। স্বভাবতই বেঙ্গল মিরর নিউজ পোর্টালের প্রতিটি সদস্য ও সমগ্র নিউজ টিম তার আত্মার শান্তি কামনা করে এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়।

রবিবার ১ লা ডিসেম্বর  বিকাল ৪ টা ৫৫ মিনিট নাগাদ ব্যারাকপুরের একটি মাল্টি সুপার বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর । সিওপিডির সমস্যায় বিগত বেশ কয়েকবছর ধরেই। ভুগছিলেন তিনি। গত কয়েক বছরের মধ্যে বহুবার তাকে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইদানিং তার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তাকে পুনরায় তার বর্তমান ঠিকানার কাছেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কলকাতায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার দিয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তার। হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম কয়েকদিন ভাল ছিলেন শিশুরঞ্জনবাবু । তারপর থেকেই তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে । অবস্থার অবনতি হওয়ার পরই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মাঝে জানা  সংক্রমণ ছড়িয়েছে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অর্থাৎ মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর। গত কয়েকদিন চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না বর্ষীয়ান আইপিএস। মৃদুভাষী হলেও স্পষ্টবক্তা হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন শিশুরঞ্জন পাল।

তিনি রেখে গিয়েছেন তার স্ত্রী কল্পনা পাল, পুত্র সঞ্জীব পাল, পুত্রবধূ তুলিকা পাল এবং নাতি সোহম পালকে।

দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশার দরুন এই প্রতিবেদনের সাংবাদিকের তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তাই তার পুত্র সঞ্জীব পাল কে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন তার পিতা আইপিএস শিশু রঞ্জন পালের জন্ম হয়ে কলকাতার ঠাকুর পুকুর অঞ্চলে। বরাবর পড়াশোনায় ভালো থাকলেও অভাবের সংসার ছিল। বিভিন্ন আইপিএস অফিসারদের ছোটবেলা থেকেই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তার স্বপ্ন ছিল। কঠিন পরিশ্রম করে তিনি প্রথম জীবনে তিনি কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট হয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে কর্মরত অবস্থায় তিনি আবারও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় এর মাধ্যমে ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস অর্থাৎ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় ১৯৮০ সালে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন তিনি। চাকরির পর কিছুদিন প্রবেশনে থাকার পর তার প্রথম পোস্টিং হয় ডিএসপি ডি এন্ড টি চুঁচুড়া ( হুগলী) । এরপর এসডিপিও উলুবেরিয়া, জিআরপি ডিএসআরপি শিয়ালদহ ডিভিশন, এসডিপিও বারাসাত হন। এরপর রাজ্য পুলিশের ১১ নং ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট, এসডিপিও তমলুক, অ্যাডিশনাল এসপি অপারেশন্স মেদিনীপুর, অ্যাডিশনাল এসপি অপারেশন্স হলদিয়া হন। এরপর প্রমোশন নিয়ে ১১ নং ব্যাটালিয়নের সিও, ইএফআর ( ইস্টার্ন  ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস) সিও, এসআরপি  – খড়গপুর ডিভিশন, এসএসআইবি ( স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট) –  আইবি ( ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরির শেষ জীবনে ডিআইজি আইবি পদে থেকে অবসর গ্রহণ করেন । চাকরীর প্রথম থেকে শুরু করে  বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্বভার সততা এবং সাফল্যের সাথে সামলান। মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে পোস্টিং থাকাকালীন একাধিক পুলিশ অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। একেবারে আপোষহীন এবং নিতান্তই সাদামাটা জীবন ছিল তার। অবসরের পর তার পছন্দের জায়গা বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে শুরু করে আলিপুরের আইপিএস মেসে সময় কাটানো। কোনরকমের অন্যায়ের জোর গলায় তিনি বার বার প্রতিবাদ করে গিয়েছেন বরাবরই।
শেষপর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হার মানলেন শিশুরঞ্জনবাবু ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *