ASANSOL

আসানসোলে ডিজিটাল এ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা প্রতারণা, ধৃত এক মহিলা সহ ৯ জন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol Latest News Updates ) আসানসোল শহরে প্রথম ডিজিটাল এ্যারেস্টের ঘটনা ঘটলো। ডিজিটাল এ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে আসানসোলের বাসিন্দা চঞ্চল কুমার বন্দোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাইবার প্রতারণা চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা।  গত জানুয়ারি হওয়া এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তদন্তে নেমে, বড়সড় সাফল্য পেলো আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল সাইবার থানা। এই ঘটনা জড়িত থাকার অভিযোগ এখনো পর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে একজন মহিলা আছেন। ধৃতদের মধ্যে তিনজন দিল্লির বাসিন্দা। তাদেরকে আসানসোল সাইবার থানার বিশেষ দল দিল্লি থেকেই গ্রেফতার করেছে। দুজন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাকে ধরা হয়েছে কলকাতার একটি হোটেল থেকে। বাকি ৪ জনকে তাদের বাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লির তিনজন ডিজিটাল এ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সাইবার প্রতারণা চক্রের মাস্টার মাইন্ড বা মুল চাঁই।

এক মহিলা সহ বাকি ৪ জন পশ্চিমবাংলার কলকাতার নিউটাউন, দক্ষিণ ২৪ পরগণার জগদ্দল, ভাটপাড়া ও হরিদেবপুরের বাসিন্দা। ধৃত ৯ জনের নাম হলো বেদ আনন্দ, বিশ্বঞ্জয় কুমার, নবজিৎ সিং, যতীন শর্মা, সুপ্রীতি চৌধুরী, রসিদ খান, সুনীল কুমার, নিখিল রোহত্যাগি ও প্রতীক বালচন্দ বাগাস। এই সাইবার প্রতারণা চক্রের ৬ জন এই মুহুর্তে পুলিশের হেফাজতে আছে। দিল্লির তিনজনকে ট্রানজিট রিমান্ডে আসানসোলে নিয়ে আসা হচ্ছে। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ ১১ টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, তিনটি এটিএম কার্ড, একটি ক্রেডিট কার্ড ও বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্কের একাধিক চেকবই পাওয়া গেছে।


আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের আসানসোল সাইবার থানায় শনিবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ডিসিপি ( হেডকোয়ার্টার) অরবিন্দ কুমার আনন্দ বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি আসানসোল সাইবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আসানসোল দক্ষিণ থানা এলাকার বাসিন্দা চঞ্চল কুমার বন্দোপাধ্যায়। ঐ অভিযোগে ঐ ব্যক্তি লেখেন, তাকে গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাইবার অপরাধীরা ” ডিজিটাল এ্যারেস্ট” করে রেখেছিলো। গত ১০ জানুয়ারি এক ব্যক্তি এই ব্যক্তিকে অডিও কল করে। বলা হয়, একটি বহুজাতিক কুরিয়ার কোম্পানির মাধ্যমে তার আধার কার্ড ব্যবহার করে বেআইনি ভাবে ব্যাঙ্ককে পার্সেল গেছে। তাতে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন।

এরপর তাকে ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারির মধ্যে দিল্লির সাইবার থানা ও সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে একাধিকবার অডিওকল ও ভিডিওকল  তাকে ভয় দেখিয়ে ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাইবার থানা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ দল তৈরি করে। তদন্তকারী অফিসার বা আইও ছাড়াও সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন এসিপি ( সাইবার) বিশ্বজিৎ নস্কর ও সাইবার থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। এরপর চঞ্চলবাবুর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়। তা খতিয়ে দেখা যায় শিলিগুড়ির একটি ব্যাঙ্কে সেই টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। আমরা ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঐ একাউন্টের কেওয়াইসি সংগ্রহ করি। তাতে আমরা একটা মোবাইল ফোন পাই। সেই সূত্র ও টেকনিকালি সাপোর্ট নিয়ে প্রথমে কলকাতার নিউটাউন থেকে বেদ আনন্দকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একে একে জগদ্দল থেকে বিশ্বঞ্জয় কুমার, কলকাতার হোটেল থেকে নবজিৎ সিং ও যতীন শর্মা, হরিদেবপুর থেকে সুপ্রীতি চৌধুরী ও ভাটিপাড়া রসিদ খানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে দিল্লির বাসিন্দা সুনীল কুমার, নিখিল রোহোত্যাগী ও প্রতীক বালচন্দ বাগাস হয়েছে। তাদেরকে আদালতে পেশ করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।


ডিসিপি (হেডকোয়ার্টার) আরো বলেন, ৪০ টির মতো একাউন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে নয়টি একাউন্ট ফ্রীজ করা হয়েছে। এইসব ব্যাঙ্ক একাউন্ট এনসিআরপি বা ন্যাশানাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে অভিযোগ আকারে রয়েছে। ধৃত বেদ আনন্দ ও বিশ্বঞ্জয় কুমারের দুটি একাউন্টে যথাক্রমে ৩ কোটি ও ১২ কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ পাওয়া গেছে। এরা মুলতঃ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক একাউন্ট প্রতারকদের দিতো। ধৃত সুপ্রীতি চৌধুরী ও রশিদ খান বিদেশে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। একইভাবে দিল্লি থেকে গ্রেফতার হওয়া সুনীল ও প্রতীক ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে একাউন্ট কালেক্ট করে চিন, দুবাই, নেপাল ও সাউথ ইস্টের বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের সহযোগীদের দিতো।
তিনি বলেন, এটা আসানসোলে ডিজিটাল এ্যারেস্টের প্রথম মামলা। যা সাইবার থানা খুব ভালোভাবে তদন্ত করে নজনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। আশা করছি, দ্রুত এর কিনারা করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *