ASANSOL

দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম বিশেষ সমীক্ষায় ডুগডুগি পাখির সন্ধান মিলল, চিত্তরঞ্জন এর জলাশয় বিদেশি পাখির সংখ্যা কমছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য। আসানসোল। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এবার শীতে পাখি শুমারি করতে গিয়ে যারপরনাই চমকে গেলেন দুর্গাপুর বন বিভাগ এবং উইংস( ওয়াইল্ড লাইফ ইনফরমেশন এন্ড নেচার গাইড সোসাইটি-)এর পর্যবেক্ষক ও বনদপ্তরের আধিকারিকরা । দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম শীতের দেশ থেকে উপস্থিত হয়েছে অতি সুদৃশ্য কমন মার্গেনসার বা ডুবডুবি পাখি। এই শীতের আগে কোনদিনই দক্ষিণবঙ্গের কোথাওই এই পাখির সন্ধান পাওয়া যায় নি। উত্তরবঙ্গের গজলডোবা তে এদের দেখা যায় । এবার তার দেখা মিলেছে আসানসোল সংলগ্ন বার্নপুরের দামোদর সংলগ্ন ভুতাবুড়িতে।

যাকে পরিযায়ী পাখির আনাগোনায় অত্যন্ত নতুন সংযোজন এবং খুশির বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন উইংস-এর যুগ্ম সম্পাদক শঙ্খ মিশ্র। এই পাখির দেখা পাওয়া অত্যন্ত চমকপ্রদ বলেই তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন এতদিন খুব বেশি হলে ৫-৬ টি ডুবডুবি শীতের সময় দেখা যেত তিস্তার আপার গাজোলডোবা অঞ্চলে। বেশি সংখ্যায় এদের উপস্থিতি পাওয়া যায় অরুণাচল প্রদেশ, আসামে। কিন্তু বাঁকুড়া, পুরুলিয়া , দুই বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর সম্বলিত দক্ষিণবঙ্গে কখনোই এই পাখির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সে দিক থেকে এবারের পাখি শুমারি তাদের খুশির কারণ হয়ে উঠেছে। ‌


প্রসঙ্গত  প্রতিবছরই জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্গাপুর বন বিভাগ এবং উইংস-এর পর্যবেক্ষকেরা জেলার গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি গুলিতে পরিযায়ী পাখি ও স্থায়ীভাবে বসবাসকারী পাখিদের সংখ্যা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় খুঁটিয়ে দেখেন। ‌ বার্ষিক এই পর্যবেক্ষণ জলাশয়গুলির পরিবেশগত অবস্থা এবং বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে একটি ধারণা পেতে সাহায্য করে। এ বছরও সেই পর্যবেক্ষণ চলাকালীন বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি যেগুলি দশকের পর দশক ধরে এইসব অঞ্চলে আসছে তাদের সন্ধান তারা পেয়েছেন। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে এবার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সন্ধান তারা পেয়েছেন বার্ণপুর এলাকায় কমন মার্গেনসার বা ডুবডুবি পাখির উপস্থিতি। ডিএফও অনুপম খান বলেন এই পাখিটি বাংলায় এতটাই বিরল যে ইংরেজি থেকে বাংলায় এর নাম খুব একটা প্রচলিতই হয়নি। তবে আনন্দের এই সংবাদের সঙ্গেই তারা অশনি সংকেত দেখছেন চিত্তরঞ্জনের জলাশয় গুলিতে পরিযায়ী পাখির ক্রমশ কমতে থাকা সংখ্যায়।


ওয়াইল্ড লাইফ ইনফরমেশন এন্ড নেচার গাইড সোসাইটি ‌ তথা উইংসের আরেক যুগ্ম সম্পাদক মনিশ চ্যাটার্জী চিত্তরঞ্জন রেল শহরের জলাশয় গুলির মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা কর্নেল সিং পার্ক জলাশয়ের। প্রতিবছরই তার আগের বছরের তুলনায় এখানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে উইংস মনে করছে চিত্তরঞ্জনের জলাশয়গুলি এক সময় বছরের পর বছর ধরে কচুরিপানায় ভরে ছিল।

‌ সে সময় এখানে আসা পরিযায়ী পাখিগুলি জলের নিচে থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারছিল না। ফলে তারা অন্যত্র চলে যেতে থাকে। পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত তাদের পূর্ববর্তীদের পথ অনুসরণ করে শীতের দেশ থেকে পাড়ি দেয়। বেশ কয়েক বছর পরিযায়ী পাখিরা চিত্তরঞ্জনমুখী না হওয়ায় তাদের পরবর্তী বংশধরেরা এই জলাশয়ে কম আসছে । বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন উইংসের যুগ্ম সম্পাদক মনীশবাবু। তিনি বলেন এ বছর আমরা সর্বমোট প্রায় ৫০০০ বিদেশী পাখি দেখতে পেয়েছি আমাদের এই এক মাসে বিশেষ পরিদর্শনে সময়। মাইথনে অবশ্য জলের নিচে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া সেই হাসের সংখ্যা বেড়েছে। জলাভূমি সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় আরো উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *