আসানসোল ডিভিশনে একাধিক পরিকল্পনা : বরাদ্দ হয়েছে অর্থ, হবে রেল কর্মীদের কোয়ার্টার, রানিং স্টাফদের লবি ও আরপিএফ ব্যারাক
শীঘ্রই অন্ডাল ও সাঁইথিয়ার মধ্যে নতুন মেমু ট্রেন চলবে
.বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোলঃ* পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন ২৮ কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে রেল কর্মচারীদেরকে আরো ভালো আবাসনে থাকার সুবিধা দিতে। আসানসোল ডিভিশনের লোকো পাইলটদের জন্য একটি তিন তারা হোটেলের সুবিধা সহ সুসজ্জিত একটি লবি তৈরি করা হবে। যার জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি কোটি টাকা খরচ করে আরপিএফ জওয়ানদের জন্য উন্নত ব্যারাকও তৈরি করা হচ্ছে। যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।




দেশের সাধারণ বাজেট হওয়ার পরে আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম বা ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অফিসে এক সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনা কথা জানান আসানসোলের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার চেতনানন্দ সিং। ডিআরএম জানিয়েছেন, আসানসোল সহ দেশের বিভিন্ন ডিভিশনে রেলের কোয়ার্টারগুলি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা এতোদিন সম্ভব হয়নি। যে কারণে এই ডিভিশনের রেল কর্মীদের ভালো আবাসন বা কোয়ার্টারের জন্য ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। যারমধ্যে ১৪ কোটি টাকা দিয়ে নতুন কোয়ার্টার তৈরি করা হচ্ছে। আর পুরনো কোয়ার্টার মেরামতের জন্য ১৪ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি রেল কলোনিতে ওপেন জিম ও পার্ক থাকবে। কলোনিগুলিতে এটিএম এবং কিয়স্কও করা হবে। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের জন্য আলাদাভাবে দেড় কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
ডিআরএম আরো বলেন, আসানসোল ডিভিশন পণ্য লোডিংয়ের ক্ষেত্রে দেশের সপ্তম স্থানে রয়েছে। লোডিং এবং আনলোডিং সম্মিলিতভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে আসানসোল ডিভিশন। একটি পণ্যবাহী ট্রেন বা একটি যাত্রীবাহী ট্রেনই হোক না কেন, এর চালানোতে কর্মীদের ( রানিং স্টাফ) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের জন্য তিন তারা বা থ্রি স্টার হোটেলের মতো সুবিধা সহ লবি তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য ইতিমধ্যেই ৫ কোটি টাকার কাজ করা হচ্ছে। এখন আরো ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত লবি তৈরি করা হবে।
ডিআরএম আরে বলেন গত ১৯ বছরে, প্রতি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারে আরপিএফ ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া অফিসও নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী তিন/চার মাসের মধ্যে সব জায়গায় নতুন আরপিএফ ব্যারাক তৈরি করা হবে। আগেই অনেক ব্যারাক বানানো উচিত ছিল। কিন্তু ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ায় তাদের ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে কাজ শেষ করা যায়নি। তবে আগামী তিনচার মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আসানসোলের ডিআরএম চেতনানন্দ সিং বলেন, আসানসোল স্টেশনে যাত্রী সুবিধা আরো বাড়বে। একইভাবে দুর্গাপুর স্টেশনের সংস্কার ও ২০ কোটি টাকা দিয়ে একটি পণ্য বা গুডস শেড তৈরি করা হবে। শীঘ্রই অন্ডাল ও সাঁইথিয়ার মধ্যে নতুন মেমু ট্রেন চলবে। মাল্টি ট্র্যাকিং প্রকল্পটি রানিগঞ্জ স্টেশনের মধ্য দিয়ে যাবে। তাই সেখানেও অনেক কাজ হবে। রেলের জমি থেকে দখলদারি উচ্ছেদে বাধা পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জোর করে কিছু করা হবে না। যত বাধা বা বিরোধই থাকুক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
তিনি বলেন, রেলের জমি বছরের পর বছর খালি পড়ে আছে। সেইসময় রেলের ফান্ড ছিল না এবং জমি পাওয়া যায়নি। এ কারণে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর কিছু মানুষ সেখানে বসবাস শুরু করে। কিন্তু এখন রেলের নতুন প্রকল্প আসছে। এ কারণে রেলওয়ের জমির প্রয়োজন রয়েছে। ডিআরএম বলেন, দুর্গাপুর রেলওয়ে স্টেশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন। সেখানে একটি পণ্যের শেডও রয়েছে যেখানে পণ্য পরিবহন করা হয়। দুর্গাপুর স্টেশন থেকে আরও ট্রেন চালানোর দাবিও উঠেছে। কিন্তু জায়গার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে ২০ কোটি টাকা দিয়ে একটি নতুন পণ্যের শেড তৈরি করা হবে। দুর্গাপুর স্টেশনকে আরো উন্নত করা হবে। অন্ডাল ও দুর্গাপুরকে নিয়ে যৌথ পরিকল্পনায় কাজ করা হচ্ছে। সেখানে বসানো হবে পঞ্চম লাইন। যার ফলে ট্রেন চলাচল সহজ হবে।
ডিআরএম বলেন, প্যাসেঞ্জার বা লোকাল ট্রেনগুলির অপারেটিং বা চলাচলের সময় আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে। তা আরও উন্নত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই নতুন মেমু অন্ডাল এবং সাঁইথিয়ার মধ্যে চলাচল শুরু করবে। সকাল ১১টার সময় অন্ডাল থেকে সেই ট্রেন চলবে। তিনি বলেন, ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মধুপুরে ২৫/৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কোচিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। যা খুব শিগগিরই শুরু হবে। এর ফলে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেখান থেকে আসানসোলে ট্রেনগুলিকে আনার প্রয়োজন হবে না।
ডিআরএম জানিয়েছেন, আসানসোল স্টেশনে তৃতীয় নতুন ফুট ওভার ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। সব প্ল্যাটফর্মে লিফট বসানো হবে। এতে রেল যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে।
আসানসোলের রেলপারের দিকে ৭ নং প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে ডিআরএম বলেন, রেলের তরফে সেদিকের রাস্তাটি সরানোর বিষয়ে আসানসোল পুরনিগমকে বেশ কয়েকটি চিঠি লেখা হয়েছে। কারণ ঐ এলাকায় যাবতীয় উন্নয়নমুলক কাজ রেল করবে। এটি একটি খুব জটিল কাজ। কারণ অনেক লোক সেখানে রয়েছেন। যারা ঐ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। এ অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে ধারাবাহিকভাবে কথা বলা। তিনি বলেন যে, এই রাস্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আসানসোলের রেলপার এলাকাকে আসানসোল স্টেশন এবং আসানসোলের মেন বাজার এলাকাকে সংযুক্ত করে। এমতবস্থায় রেলক্রসিং গড়ে তুলতে হলে ঐ রাস্তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এটি সহজ হবে না। এর জন্য নিরন্তর কথা বলে, আলোচনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা চলবে বলে ডিআরএম চেতনানন্দ সিং জানিয়েছেন।