ASANSOL

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০২৬ সালে থাকবে না : বিজেপি, স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না : দাসু

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও বাংলার অর্থ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পেশ করা বাজেটের তুলনা করে সমালোচনায় সরব হলো বিজেপি। সেই সমালোচনার পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস।
শনিবার সকালে আসানসোলের জিটি রোডের উষাগ্রামে একটি হোটেলে ” বাজেট টক ” শীর্ষক কর্মসূচিকে সামনে রেখে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় আইটি সেলের ইনচার্জ তথা বাংলার সহ-প্রভারী বা কো-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য, বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডাঃ অশোক লাহিড়ী, রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, বিজেপি জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় ও কুলটির বিধায়ক ডাঃ অজয় ​​পোদ্দার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।


সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত মালব্য ও ডাঃ অশোক লাহিড়ী কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ও রাজ্য সরকারের বাজেটের তুলনা করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে প্রস্তাবাকারে সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর জন্য কিছু না কিছু আছে। এই বাজেটে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প তৈরির পাশাপাশি যুব, বয়স্ক, মহিলাদের প্রতি যেভাবে নজর দেওয়া হয়েছে, তাতে এই বাজেট থেকে মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। অমিত মালব্য বলেন, কেন্দ্রের এই বাজেট দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্যও একটি ঐতিহাসিক বাজেট। কারণ এই বাজেটের মাধ্যমে মধ্যবিত্তদের জন্য একটি খুব বড় উপহার দেওয়া হয়েছে। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের উপর কোনও আয়কর থাকছে না। মধ্যবিত্তরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছিলেন। যা এই বাজেটে পূরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাজেটের মাধ্যমে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ও এর ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে। অন্যদিকে ডাঃ অশোক লাহিড়ী বলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার সর্বদা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে। এবারের বাজেট সেই দিকে একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হবে। বাংলার বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলার বাজেটে এমন কিছু নেই যা আগামী সময়ে বাংলার যুব ও মহিলাদের উপকারে আসবে। এখানে এমন কিছু নেই যা বাংলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। কেবল মাত্র কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া বাংলার বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করেননি।

তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার ” আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প ” গোটা দেশে বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্প কেবল বাংলায় বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে এখানকার মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আয়ুষ্মান ভারতের মতো একটি অত্যন্ত চমৎকার জনকল্যাণমূলক প্রকল্প কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য বাংলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের কল্যাণ চান না। মুখ্যমন্ত্রী কেবল তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চান। তাই তিনি বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছেন। অশোক লাহিড়ীর দাবি, এখন আর তা হবে না। এই বাজেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের শেষ বাজেট। ২০২৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থাকবে না। তার পরে যখন বিজেপি সরকার আসবে, তখন সেই প্রকল্পগুলি বিজেপি বাস্তবায়ন করবে যা বাংলার অর্থবহ উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করবে। বিজেপির দুই নেতা বলেন, এক সময় বাংলা সমগ্র দেশে শিল্পায়নের দিক থেকে প্রথম সারিতে ছিলো। কিন্তু আজ সেই পরিস্থিতি নেই। এর একমাত্র কারণ হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই সরকার শিল্পায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সব ক্ষেত্রে বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছে।


অমিত মালব্য ও ডাঃ অশোক লাহিড়ীর সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন ওরফে দাসু তার সোশাল মিডিয়া লাইভ বার্তায় পাল্টা জবাব দেন ও বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, বিজেপি নেতারা বাংলার ক্ষমতায় আসার জন্য মুঙ্গেরিলাল কি হাসিন স্বপ্ন দেখছেন। যা কোনদিন পূরণ হবে না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি নেতারা বলেছিলেন যে, তারা বাংলায় ক্ষমতায় আসছেন। বিজেপি নেতারা তারপরেও মুঙ্গেরিলাল কি হাসিন স্বপ্ন দেখছেন। ২০২৬ সালের বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের তাদের সেই স্বপ্নগুলি ভেঙে ফেলবেন বাংলার মানুষেরা। বাংলা বাজেটকে জনবিরোধী বলার আগে, এইসব বিজেপি নেতাদেরও বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির বাজেট একবার দেখে নেওয়া উচিত।

দাসু বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট সম্পূর্ণরূপে জন বিরোধী। তিনি বলেন, বাংলায় বিজেপির ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। কারণ বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আছেন। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক সহ সকল বিজেপি নেতা, যারা এই ধরণের কথা বলছেন, তাদের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করে চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গতঃ, শুক্রবার রাতে আসানসোলের ডুরান্ড হলে ” বাজেট টক ” শীর্ষক এক আলোচনা সভার আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *