ASANSOL

” জল জীবন মিশন প্রকল্প ” প্রশ্নের মুখে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার ঠিকাদারদের বকেয়া মিলছে না, বেতন পাওয়া অনিশ্চিত কর্মীদের

আসানসোল পিএইচই অফিসে বিক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ চরম অনিশ্চয়তা ও একাধিক প্রশ্নের মুখে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ” জল জীবন মিশন প্রকল্প “। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর বা পিএইচইর অধীনে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের টাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় এলাকায় পরিশ্রুত পানীয়জল সরবরাহ করার জন্য এই প্রকল্প শুরু হয়েছিলো। কিন্তু এখন এই প্রকল্পের কাজ করা পশ্চিম বর্ধমান জেলার ২০০ এর বেশি ঠিকাদারদের দাবি, কাজ করলেও তারা টাকা পাননি। সেই বকেয়া টাকার পরিমাণ কমবেশি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বকেয়া টাকা না পাওয়ায় ঠিকাদাররা তাদের অধীনে করা ঠিকা কর্মীদের মাসিক বেতন কি করে দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন। এরফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে এক হাজারের বেশি ঠিকা কর্মীদের মাসিক বেতন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। যে কারণে বুধবার দুপুরে ঠিকা কর্মীরা আসানসোলের ইসমাইলে পিএইচই অফিসে অল বেঙ্গল পিএইচই কন্ট্রাক্টর ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এ্যাসোসিয়েশনের তরফে ইঞ্জিনিয়ারকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।


আসানসোলের ইসমাইলের পিএইচই অফিসে পিএইচই ওয়েলফেয়ার কন্ট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বুধবার দুপুরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ্যাসোসিয়েশনের তরফে মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, পিএইচই সাথে যুক্ত ও জল জীবন মিশন প্রকল্পে কাজ করা ঠিকাদাররা ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাস থেকে বকেয়া পাননি। রক্ষনা বেক্ষনের টাকাও দুবছর ধরে বকেয়া রয়েছে। ঠিকা কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেতন না পেয়ে আগামী দিনে কর্মীরা ধর্মঘট করলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিরাট একটা অংশে পানীয়জল সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা কোথাও থেকে টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার।

মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করে দিলীপ দাস, অসিত মল্লিক ও সুনন্দ চক্রবর্তী সহ অন্য ঠিকাদাররা বলেন, কর্মীদেরকে কি করে বেতন দেবো, তা বুঝতে পারছি না। এর সঙ্গে রয়েছে ঠিকা কর্মীদের পিএফ ও ইএসআই। তারা বলেন, পানীয়জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা তা বন্ধ করতে চাইনা। তবে ঠিকাদাররা টাকা না পেলে তারা কিভাবে কাজ করতে পারবেন তা একটা ভাবার বিষয়। জলজীবন মিশন প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের অংশীদারিত্ব রয়েছে। তাই এই অবস্থায় আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যে যেতে চাইনা। আমাদের দাবি, ঠিকাদাররা তাদের টাকা পেতে চান। পাইপ বসানোর পরে ঠিকাদাররা রাস্তা মেরামত করেছে। সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে না।


অন্যদিকে, অল বেঙ্গল পিএইচই কন্ট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশনের তরফে বন্দনা রায় বলেন, আমরা তো ঠিকাদারের অধীনে কাজ করি। মাসের শেষে বেতন পাই। জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়ার পরে ঠিকাদাররা বলেছে, তারা আর বেতন দিতে পারবো না। কারন তারা বকেয়া টাকা পায়নি। বন্দনাদেবী আরো বলেন, এতে আমাদের কি দোষ বলুন তো? তাই এদিন আমরা পিএইচইর ইঞ্জিনিয়ারকে ডেপুটেশন দিয়ে গোটা বিষয়টি বলতে এসেছি।


এই প্রসঙ্গে পিএইচইর সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ কুমার কুন্ডু বলেন, ঠিকাদারদের পাওনা টাকা বকেয়া আছে। কত টাকা বকেয়া আছে তা বলতে পারবো না। ঠিকাদারেরা টাকা না পাওয়ায় কারণে ঠিকা কর্মীরা বেতন পাবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক। আমি অর্থ বিভাগের অফিসার নই। তাই বলতে পারবো না এই সরকারি জল প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরও এতে অংশীদারিত্ব রয়েছে। কি কারণে টাকা আসছে না এ বিষয়েও কিছু বলতে পারবো না। বেতন না পেয়ে ঠিকাদারি কর্মীরা ধর্মঘটে গেলে অবশ্যই পানীয়জল সরবরাহে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। তিনি বলেন, এই জেলায় জল জীবন মিশন প্রকল্পের ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ হলেই চারটি ব্লকে সুষ্ঠুভাবে পানীয়জল সরবরাহ করা হবে। ঠিকাদারদের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি আগেও চীফ ইঞ্জিনিয়ার সহ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। আবারও জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *