দুর্গাপুর স্টিল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক নির্বাচন , ৪২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী জোটের প্রার্থীরা, শাসক “ সন্ত্রাস ” র অভিযোগ সিটুর
বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ( Durgapur News Updates ) পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর স্টিল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক নির্বাচনে আইএনটিইউসি ও এইচএমএসকে সঙ্গে নিয়ে জোট বাঁধলো আইএনটিটিইউসি ! আর তাদের মনোনয়ন দাখিলকে ঘিরেই হাতাহাতি থেকে উত্তেজনা, সবকিছুই হলো। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিরোধিতারা মনোনয়ন পত্র জমা না দেওয়ায় শুক্রবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলো জোটের প্রার্থীরা। এদিকে, তৃণমূলের সন্ত্রাসেই দুর্গাপুর স্টিল পিপলস কো-অপারেটিভ নির্বাচনকে একতরফা বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ বিএমএস ও সিটু নেতৃত্বর। কোন সন্ত্রাস হয়নি পাল্টা জবাব রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। ৯ মার্চ এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো।




দীর্ঘ ৮ বছর পরে দুর্গাপুর স্টিল পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাচন হচ্ছে । এই ব্যাঙ্কে রয়েছেন ১২ হাজার গ্রাহক। সবমিলিয়ে রয়েছে ৪২টি আসন। ২০১২ সালে এই ব্যাঙ্কের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৭ সালে তার মেয়াদ শেষ হয়। তার পর থেকে ৮ বছর ধরে হয়নি নির্বাচন। রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের হস্তক্ষেপে ২০২৫ সালে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। তারই মধ্যে হিন্দুস্তান মজদুর সংঘ ( এইচএমএস), কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি অনুমোদিত হিন্দুস্তান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে অলিখিতভাবে জোট বাঁধে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত হিন্দুস্থান স্টিল প্ল্যান্ট মজদুর ইউনিয়ন। হিন্দুস্তান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নকে ৬টি আসন, হিন্দুস্থান মজদুর সংঘকে ৩টি আসন দিয়ে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের হিন্দুস্তান স্টিল প্ল্যান্ট মজদুর ইউনিয়নের ৩৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু হিন্দুস্তান স্টিল প্ল্যান্ট মজদুর ইউনিয়ন শেষ পর্যন্ত ৩৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা করে। দুটি বেশি মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া ঘিরেই শুরু হয় নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও হাতাহাতি। উত্তেজনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় দুর্গাপুর থানা পুলিশকে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রথম দিন থেকেই ব্যাংকের ত্রি সীমানায় দেখা যায়নি ভারতীয় মজদুর সংঘ ও সিটুর কোন প্রতিনিধিকে। তারা কার্যত দলীয় কার্যালয় থেকেই তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে সরব হয়।
সিটুর সভাপতি বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিল করার প্রথম দিন থেকেই বহিরাগতদের দিয়ে গোটা এলাকা সন্ত্রস্ত করে রেখেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই জন্যই আমাদের কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যেতে পারেনি। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ব্যাংককে রক্ষা করার মত পরিস্থিতি কি ছিল না? সেই জন্যই কি মনোনয়নপত্র দাখিল আটকাতে বহিরাগতদের নিয়ে আসা হলো? সবাইকে অংশগ্রহণ করতেও দেওয়া হলো না। এভাবেই ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। পাল্টা হিন্দুস্তান স্টিল প্ল্যান্ট মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাশীষ ঘোষ বলেন, শিল্প নগরীর আবহাওয়াকে সুষ্ঠ রাখার জন্য দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমরা আহ্বান করেছিলাম। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এইচএএইচএমএস ও আইএনটিইউসি। সিটু আর বিএমএসের কর্মীরা বলেছিল আমরা লড়তে চাই। আমরাও ওদের সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু তাদের কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে আসেননি ও কেউ জমাও দেননি। সন্ত্রাসের কোন আবহই তৈরি হয়নি। ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বিরোধীরা।
বহিরাগতদের দিয়ে ব্যাংকের চতুর্দিক ঘিরে রাখা হয়েছে বলে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন বিএমএস অনুমোদিত দুর্গাপুর ইস্পাত কর্মচারী সংঘের কার্যকরী সদস্য মানস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গেলে শুধু প্রাণ সংশয়ই নয়, অনেক কিছুই হতে পারতো। অযোগ্যদের হাতে ব্যাংক এলে কি পরিস্থিতি হতে পারে সবাই বুঝতে পারছেন। পুলিশের কাছে আমরা
অভিযোগ করতে গেলেও কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা অরাজনৈতিক দল। আমাদের ভয় পাচ্ছে সে জন্যই আমাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেওয়া হয়নি।
তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বলেন, আইএনটিটিইউসি ছাড়াও আইএনটিইউ সি ও এইচএমএস মনোনয়নপত্র জমা করেছে। সিটুর এই মুহূর্তে কোন জনসংযোগ নেই। সেই জন্য ওদের হয়ে কেউ দাঁড়াতে চাইছে না। ওরা কোন প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। বিএমএসএরও প্রার্থী পেতে দুর্বলতা রয়েছে। তাই সেই দুর্বলতাকে ঢাকার জন্য তাদের তরফে নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছে।