পুরুলিয়ার চালানে অবৈধভাবে বালি পাচার ? বেহাল হচ্ছে রাস্তাঘাট থেকে ব্রিজ, বিক্ষোভ
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : পুরুলিয়া চালানে চলছে অবৈধভাবে বালি পাচার, বেহাল হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে দীর্ঘ প্রাচীন ব্রিজ, অথচ সব জেনেশুনেও, নিরব সকল স্তরের সদস্যরা। তবে এবার এলাকায় কর্মসংস্থানের দাবি ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা বিষয় লক্ষ্য করে ময়দানে নামলো বাউরী সমাজের মহিলা সদস্যরা। সোমবার
রানীগঞ্জের তিরাট ঘাটে, অবৈধ বালি উত্তোলন, করা হচ্ছে এই দাবি তুলে, সেই বালি পরিবহনের জন্য, হাড়াভাঙ্গা ব্রিজের জরাজীর্ণ অবস্থা হয়েছে বলেই দাবি করে প্রতিবাদ দেখালো বাউরী সমাজ।




রানীগঞ্জের তিরাট ঘাটে তিনটি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ইসিএল-এর বালি উত্তোলনের কাজ চলে। এছাড়াও, আসানসোলের বাসিন্দা মলয় নামে এক ব্যক্তি বালি উত্তোলনের মঞ্জুরি পেয়েছে বলে জানা গেছে। আর সেই মঞ্জুরী মোতাবেক রানীগঞ্জের এলাকা দিয়ে, দশ চাকার ১৬ চাকার ১৮ চাকার ট্রাকগুলিতে ৪০ থেকে ৫০ টন বালি বোঝাই করে বের করা হচ্ছে, যদিও গ্রামীণ রাস্তার পথগুলির ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ থেকে কুড়ি টন । ফলে গ্রামীণ রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, বলেই দাবি। এছাড়া, হাড়াভাঙ্গা ব্রিজ যা ইংরেজ আমলের জরাজীর্ণ ব্রিজ, বেশ কয়েকটা বর্ষায় এই ব্রিজ ধসেও গিয়েছে, তারপরও সেই ব্রিজ দিয়ে এই সমস্ত যানবাহন যাতায়াত করে, তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কা জনক যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড়সড় বিপত্তি। বর্ষা নামার আগেই এই ব্রিজ সংস্কার না হলে, এই ভারি ভারী বালি বোঝাই ট্রাক গুলির কারণে, যেকোনো সময় ১০-১২ টি গ্রামের যাতায়াত নিমেষে বন্ধ হয়ে যাবে। বালি বোঝাই এই যানবাহনগুলির জন্য যে চালান দেওয়া হয়, তা দামোদর নদের নয়, পুরুলিয়া জেলার, একটি নদীর চালান দেওয়া হয় এখান থেকে। কিন্তু বালি উত্তোলন স্থল দেখানো হচ্ছে বাঁকুড়া জেলার শালতোড় ব্লকের শালমা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সাহেবডাঙা থেকে, তারপরও সেখানের বালি পরিবহন করা হয় রানীগঞ্জ ব্লকের তিরাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে, আর তাও আবার বিশাল বিশাল সব ভারী যানে পরিবহন করা হচ্ছে। একটি পৃথক ঘাট থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে মলয় নামের এক ব্যক্তির চালানের মাধ্যমে বালি তোলা হচ্ছে, যার সঙ্গে স্থানীয় দিলীপ নামে একজন জড়িত বলে জানা গেছে।
সোমবার সেখানে
একজন কর্মচারীর সঙ্গে গ্রাহকের ছদ্মবেশে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে বালি প্রতি ট্রলিতে ৩২০০ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। চালান সহ বালি নেওয়ার কথা বললে তারা জানায়, চালানের দাম ৪০০০ টাকা, যা অনেকের পক্ষে ব্যয় বহুল, তাই বিনা চালানে বালি দেওয়া হয় বলেই জানা গেছে, তবে অনেকেই, কোন কিছু উপায় না দেখে অন্যায় ভাবে বালি নিতে বাধ্য হয়। জানা গেছে এখান থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে ট্রাক্টর, ট্রলি বালি তুলে তা আসানসোল ও আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করে। সব ট্রাক্টরেই বালি ওভারলোড থাকে, তাছাড়া তাদের পোষাবেই বা কি করে ? আর তার জন্য অনেক ট্রাক্টরের আকার তার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ওভারলোড বালির সরবরাহ করা যায়। আর সেই সকল নিয়েই নদ থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন, জরাজীর্ণ রাস্তা ও হাড়াভাঙ্গা ব্রিজের বেহাল দশার প্রতিবাদে ও স্থানীয় বেকারদের বালি ঘাটে কাজ দেওয়ার দাবিতে সোমবার হাড়াভাঙ্গা ও তিরাট এলাকার মহিলারা বালি পরিবহনকারী যানবাহন আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
প্রতিবাদী মহিলারা দাবি করেন, “আমাদের এলাকা থেকে অবৈধভাবে নদের বালি তুলে ভারী যানবাহনে বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এতে আমাদের গ্রামের রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে আমরা যাতায়াত করি, বাচ্চারা স্কুলে যায়, এতে অনেক সমস্যা হচ্ছে আর তার সাথে দুর্ঘটনার ভয় তো রয়েছেই। এছাড়া বালি ঘাটে বাইরের লোক কাজ করছে, অথচ স্থানীয় গ্রামবাসীরা বেকার। আমাদের দাবি, গ্রামীণ রাস্তা ভালোভাবে তৈরি করা হোক ও স্থানীয় বেকারদের কাজ দেওয়া হোক। যতক্ষণ না দাবি মানা হবে, আমরা বালি পরিবহনকারী যান চলতে দেব না।”
এদিন সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর সাথেই, বাউরি সমাজের ব্যানারে স্থানীয় গ্রামবাসীরা হাড়াভাঙ্গা ব্রিজ জাম করে প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, “এই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন যাতায়াত করছে, কিন্তু ব্রিজের ধারণক্ষমতা এতটা নেই বলেই দাবি তাদের। তাদের আশঙ্কা এই বালি চলাচলের ফলে ব্রিজের অবস্থা অত্যন্ত জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি, কিন্তু প্রশাসনের কানে কথা ঢুকছে না, বলেই দাবি তাদের। তারা জানান যদি দ্রুত ব্রিজ মেরামত না করা হয়, তাহলে আমরা আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলন করব এর পাশাপাশি এই ব্রিজ দিয়ে বড় যানবাহন চলতে দেব না।”
সোমবার এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিবাদকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। পরে তিন দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে বলে আশ্বাস পেলে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি