ASANSOL

আসানসোলে ডিআই অফিসে তালা, জিটি রোড অবরোধ, বিক্ষোভ, রাস্তায় যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা, অশিক্ষা কর্মী অধিকার মঞ্চ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে ২০১৬ সালে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি নিযুক্ত প্রায় ২৬০০০ শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের চাকরি বাতিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছেন যে এই নিয়োগে কেলেঙ্কারি হয়েছে। তা স্বচ্ছতার সঙ্গে তা করা হয় নি। তাই যোগ্য এবং অযোগ্য শিক্ষকদের আলাদা করা যাবে না। তাই পুরো প্যানেলটি বাতিল করা হয়েছে।
এর বিরুদ্ধে গোটা বাংলার সঙ্গে বুধবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমান জেলা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা, অশিক্ষা কর্মী অধিকার মঞ্চের ব্যানারে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষা কর্মীরা আসানসোলের এসবি গড়াই রোডের সুকান্ত ময়দান সংলগ্ন ডিআই অফিস পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। তার তারা অফিসে ঢুকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ডিআই সুনীতি সাঁপুইয়ের চেম্বারের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। চলে তুমুল বিক্ষোভ। তবে এই সময় ডিআই বা অন্য কাউকে ডিআই অফিসে দেখা যায় নি।


এর আগে, এই সমস্ত শিক্ষ, শিক্ষিকা ও অশিক্ষা কর্মীরা আসানসোল জিটি রোডের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মোড় সংলগ্ন শনি মন্দিরের সামনে জড়ো হন। সেখানে তারা প্রায় আধঘন্টার মতো জিটি রোড অবরোধও করেন। এরপর, তারা সেখান থেকে নুরুদ্দিন রোড, ময়দাকল মোড় হয়ে ডিআই অফিসে পৌঁছা। তারপর সেখানে প্রতিবাদ করেন ও তারা অফিসের গেটে তালাও লাগিয়ে দেন ।


এই প্রসঙ্গে, আন্দোলনকারী শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষা কর্মীরা বলেন, আমরা সবাই যোগ্য। আমরা নিজেদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি। কিন্তু এসএসসি, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরের জন্য যেভাবে আমাদেরকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে, তা কখনই সহ্য করা যাবে না। তারা আরো বলেন, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কোনও ভুল পথ অবলম্বন করিনি। তবুও আমাদেরকে অযোগ্য শিক্ষকদের সাথে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা সবাই স্পষ্ট করে বলেন যে, এসএসসির কাছে ওএমআর শিটের একটি কপি ( মিরর ইমেজ) আছে। যদি সেই মিরর ইমেজ প্রকাশিত হয়, তাহলে স্পষ্ট হবে কে অযোগ্য এবং কে যোগ্য। কিছু মানুষকে বাঁচানোর জন্য এটা করা হচ্ছে না। এই শিক্ষকরা বলন, দুই দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই যোগ্য শিক্ষকদের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ডেকেছিলেন। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

যোগ্য শিক্ষকদের কোনও ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না, কিন্তু সেই আশ্বাস ছিল ফাঁকা। যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন, সকলেই আমাদের সাথে খেলা করেছে। সে সিপিএম হোক বা বিজেপি অথবা বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা বলেন, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে প্রথমে তিনি যোগ্য শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাববেন। তারপরে তিনি অযোগ্য শিক্ষকদের বিষয়টিও দেখবেন। এদিন আন্দোলনরত শিক্ষকরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের কারণে যোগ্য শিক্ষকরা আজ এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন, সেই অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন এত চিন্তিত? একই সঙ্গে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেওয়া অতিরিক্ত শূন্য পদ বা সুপারনিউমেরারি পদ সৃষ্টির বিষয়ে সিবিআই তদন্ত খারিজ করার নির্দেশ দেয়। এই প্রসঙ্গে শিক্ষকরা বলেন , এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাঁচাতে অতিরিক্ত শূন্য পদ সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা সম্পর্কে কোনও তদন্ত হবে না। বরং যারা তাদের মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তারা এদিন সরাসরি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, যে যোগ্য শিক্ষকরা তাদের প্রতি হওয়া অন্যায় সহ্য করবেন না। তার জন্য যে কোন ধরনের আন্দোলন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *