আসানসোল সৃষ্টিনগরের বাসিন্দাদের বিক্ষোভ মিছিল, কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকালে আসানসোল সেনরেল রোডের আসানসোল সৃষ্টিনগরের বাসিন্দারা সৃষ্টি নগরের মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ বার করেন। সেই মিছিল সৃষ্টি নগরের রাস্তা দিয়ে এসে সেন্ট্রাম মলে এসে শেষ হয়। এই মলে আছে বেঙ্গল সৃষ্টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অফিস। আবাসিকরা মলের গেট আটকে বেশ কিছুক্ষন স্লোগান দেন। এরপরে বেঙ্গল সৃষ্টির অফিসে তারা তাদের দাবির সমর্থনে একটি স্মারকলিপি জমা দিতে যান। কিন্ত, বেঙ্গল সৃষ্টির উচ্চ আধিকারিকদের কেউ ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আগাম জানানো সত্বেও কেউ না থাকায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হন। তারা অফিসের অন্য কর্মীদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই অফিস চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিছিল ও স্মারকলিপি দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোন ঘটনা যাতে না ঘটে, তারজন্য সৃষ্টি নগর অফিস চত্বরে আগে থেকেই আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ছিলো। পুলিশ উত্তেজিত বাসিন্দাদের কোন মতে শান্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানিয়ে দেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ এখানে হবে না।




এই বিষয়ে সৃষ্টি নগরের বাসিন্দা এবং নিউরো সার্জন ডাঃ সোহাগ বসু বলেন, এটা কেবল মাত্র মেনটেনেন্স ফি বা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ১.৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা করার বিষয় নয়। ১.৮০ টাকার রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি। এটি অনেক বড় মেট্রো শহরের চেয়েও বেশি। তিনি আরো বলেন, এখানে ন্যায় বিচারের বিষয়। এখানে স্বচ্ছতার ব্যাপার আছে । যখন বেঙ্গল সৃষ্টির বাসিন্দাদের কাছ থেকে এত টাকা নিচ্ছে, তখন তাদের সেই টাকা খরচের হিসাবও দিতে হবে। সৃষ্টি নগরের বাসিন্দারা বলছেন যে তারা নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও রয়েছে যে এই ধরনের অ্যাপার্টমেন্টের ডেভেলোপার ৩ বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবেন। তার পরে বাসিন্দাদের উপর দায়িত্ব দিতে হবে। তাই সৃষ্টি নগরের মানুষ বলছে যে বেঙ্গল সৃষ্টি কতৃপক্ষকে এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। এখানকার মানুষ তাদের দায়িত্ব এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ নিজেরাই করবে। এখানে স্বচ্ছতার ব্যাপার, যার অভাব বেঙ্গল সৃষ্টি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।
একই অভিযোগ হিন্দি জনকল্যাণ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক রামধর সিংয়েরও। ২০১৮ সাল থেকে এখানকার বাসিন্দা রামধর সিং বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুসারে একটি মিছিল করা হয়েছে। আমাদের মিছিল শেষে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেই কেউ এখানে উপস্থিত ছিলেন না। যে কারণে তিনি কর্মচারীদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বেঙ্গল সৃষ্টির আধিকারিক বিনয় চৌধুরীর সাথে ফোনে কথা হয়েছে। সৃষ্টি নগরের ভেতরে নির্মিত ওড়িশি ক্লাবটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে রামধর সিং বলেন, ওড়িশি ক্লাব নির্মাণের জন্য সৃষ্টি নগরের প্রতিটি বাসিন্দার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। বেঙ্গল সৃষ্টি কতৃপক্ষ যদি ওড়িশি ক্লাবকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তার কোনও আপত্তি নেই। তবে তার আগে তাদের সৃষ্টি নগরের বাসিন্দাদের কাছ থেকে নেওয়া ২ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে। রামধর সিং বলেন, এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অফিস এবং ওড়িশি ক্লাব বন্ধ থাকবে। এখানে কোনও নির্মাণ কাজ করা হবে না। যতক্ষণ না বেঙ্গল সৃষ্টির ব্যবস্থাপনা এখানকার বাসিন্দাদের সাথে বসে সমস্যার সমাধান না করেন।
বাসিন্দাদের দাবি ও অভিযোগ সম্পর্কে বেঙ্গল সৃষ্টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (গ্রুপ হেড প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট) বিনয় কুমার চৌধুরী বলেন, আমরা সবসময় বাসিন্দাদের অভাব ও অসুবিধা নিয়ে অবহিত রয়েছি। তাদের সঙ্গে সবসময় আমরা কথা বলে, তা সমাধানের চেষ্টা করি। এবারেরও তা করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা একাধিক বাসিন্দার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ অনুসারে, প্রথম সমস্যাটি জিএসটি চার্জ সম্পর্কিত। এর একটা আইনগত দিক রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই মাসিক ব্যয়ের প্রতিবেদন, সহায়ক বিলগুলি ভাগ করে নিয়েছি। স্পষ্টতার জন্য এই নথিগুলি পর্যালোচনা করার জন্য বাসিন্দাদের সর্বদা আমাদের অফিসে আসতে স্বাগত জানানো হয়। অনেকেই অতীতে তা করেছেন। যদি তারা কোনও তথ্য যাচাই করতে চান তবে আমরা তাদেরকে আসতে বলছি ।