ASANSOL

ইসিএলের প্রজেক্টে অবৈধ কয়লা কারবার, সরব জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও বিজেপির জেলা সভাপতি, যোগসাজশের অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ( Asansol Live News Today ) পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি সোমবার আসানসোলের ১৯ নং জাতীয় সড়কের শীতলায় বিজেপি জেলা কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যও তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রসঙ্গ টেনে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড বা ইসিএলের ঝাঁঝড়া প্রজেক্ট নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ঝাঁঝড়া প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার বা জিএম এবং এজেন্টের যোগসাজশে অবৈধ কয়লা ব্যবসা করা হচ্ছে। এই অবৈধ ব্যবসা দুটি উপায়ে চলছে। প্রথমটি হলো, কয়লা তোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রিপোর্ট করা। এর ব্যাখ্যা দিয়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, খনন করা কয়লার পরিমাণের চেয়ে বেশি রিপোর্ট করা হয়। দ্বিতীয় দিকটি হল, কয়লা মাফিয়াদের কয়লা পাচার করে। তিনি বলেন, ঝাঁঝড়া প্রজেক্টের পক্ষ থেকেই এই সব করা হয়। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, প্রতি বছর মার্চ মাসে কয়লা খননের হিসাব করা হয়। কয়লা চুরির ঘটনায় ধরা না পড়ার জন্য, মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কালো কয়লার ধুলো অর্ডার করা হয়। সেই ওজন সঠিক রাখার জন্য কয়লার সাথে সেই ধুলো মিশিয়ে দেওয়া হয়।

পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা চুপ ছিলাম। যদিও গত কয়েক মাস ধরে আমি এই বিষয়ে ঐ এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়ে আসছিলাম।কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে আমি এই বিষয়ে কিছু বলিনি। তবে এখন কয়লার সাথে কালো কয়লার ধুলো মেশানোর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। এর বাইরেও, বিজেপির কাছে আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে। যে কারণে আমরা এখন এই বিষয়ে প্রকাশ্যে নিয়ে এলাম । তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কেবল পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নন, তিনি এই জেলার তৃণমূল সভাপতিও। তাই তৃণমূল কংগ্রেস ও নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এর থেকে হাত সরাতে পারেনা। তিনি বলেন যে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের সিএমডি, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার সহ সকল শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে অভিযোগ করা হবে। তিনি এও দাবি করেন যে এই অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঝাঁঝড়া প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজারকে ” ক্লোজ ‘ করা হোক।

জিতেন্দ্র তিওয়ারির কাছ থেকে জানতে চাওয়া যে অতীতে দেখা গেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, আধিকারিক এমনকি বিএসএফ ও সিআইএসএফ অফিসাররাও কয়লা পাচারের সাথে জড়িত। তখন জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী বা বিএসএফ অফিসারদের কোনও অবৈধ ব্যবসায় জড়িত পাওয়া যায় বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার দাবি, যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার সরকার নিজের লোকদের বাঁচানোর চেষ্টা করে, কেন্দ্রীয় সরকার এমন কোনও চেষ্টা করে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ” জিরো টলারেন্স” নীতি গ্রহণ করে।


একই সাথে, আসানসোল জেলা বিজেপি সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যও ঝাঁঝড়া প্রজেক্টে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জড়িত থাকারও দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি জাতীয় সম্পদের এই ধরনের চুরি সহ্য করবে না। যদি এটা বন্ধ না করা হয়, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আগামী দিনে বিজেপি বৃহৎ আকারে প্রতিবাদ করবে। একই সাথে, জিতেন্দ্র তিওয়ারি কটাক্ষ করে বলেন , যদি কয়লা ও বালি চোরাচালান থেকে আয় বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তৃনমুল কংগ্রেস দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।


এই বিষয়ে পান্ডবেশ্বরের তৃনমুল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং বিজেপির তরফে তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন , রাজনৈতিকভাবে বিজেপির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। যে কারণে তারা খবরের শিরোনামে থাকার জন্য এই ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। তিনি বলেন যে, তার বা তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও কর্মীর কোন ধরনের অবৈধ ব্যবসার সাথে যোগসূত্র নেই। তিনি জিতেন্দ্র তিওয়ারির করা অভিযোগগুলিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, এই সমস্ত অভিযোগ তাকে এবং তার দলকে অপমান করার জন্য করা হচ্ছে। তাতে কিছু হবেনা। তার পাল্টা প্রশ্ন, ইসিএলের কোলিয়ারি তো কেন্দ্র সরকারের। সেখানে তো সবকিছুই কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। তারা কি করছে? নিজেদের গাফিলতি আড়াল করতে, অন্যের ঘাড়ে দোষ দিচ্ছে। বাংলার মানুষেরা সব দেখছেন।
তবে, জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও জেলা সভাপতির অভিযোগ ও দাবি নিয়ে ঝাঁঝড়া প্রজেক্ট কতৃপক্ষ বা ইসিএলের আধিকারিকদের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *