আসানসোলের স্কুলের সেরা থৈবি, মাত্র ১৭ দিন আগে অকাল মৃত্যু, শোকের ছায়া
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* এমনটা যে হতে পারে, তা হয়তো কেউ ভাবেননি। কিন্তু হলো এটাই। যার জন্য এতো সবকিছু, সে আজ নেই। অকাল মৃত্যু তাকে নিয়ে চলে গেছে। আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা থৈবি মুখোপাধ্যায় এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা রেজাল্টে স্কুলের সেরা। আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যান স্কুল থেকে পরীক্ষা দেওয়া তার নম্বর ৬৭৪। পশ্চিম বর্ধমান জেলার সেরা ১০ জনের মধ্যে রয়েছে সে।




শুক্রবার সকালে রেজাল্ট জানার পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েছেন থৈবির বাবা-মা থেকে পরিবারের সদস্যরা। প্রায় একই অবস্থা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, অন্য শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের । গত এপ্রিলেই জন্ডিস কেড়ে নিয়েছে থৈবির ।জানা গেছে, আসানসোল উমারানি গড়াই মহিলা কল্যান স্কুলের থৈবি মুখোপাধ্যায় সবসময়ই স্কুলের সেরা। সবার কাছে সে ছিলে জনপ্রিয়।
বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। একেবারে সাদাসিধা গৃহবধূ মা পিউ মুখোপাধ্যায়।এই বছর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলো থৈবি। তবে তার আগেই থৈবির জন্ডিস ধরা পড়েছিলো। পরীক্ষা শেষ হতেই তার চিকিৎসা করাতে মেয়েকে নিয়ে ভেলোর ছুটে গেছিলেন বাবা ও মা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষার পরে চিকিৎসকরা বলেছিলেন তার লিভার ট্রান্সফার করতে হবে। তার জন্য খরচ হবে ১ কোটি টাকা। সেই কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসে থৈবির স্কুল। ।
পাশে দাঁড়ায় বলতে গেলে গোটা শহর। তার চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়াতে সোশাল মিডিয়ায় আবেদন করেন। মেলে ব্যাপক সাড়া। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে পাওয়া গেছিলো ৪৫ লক্ষ টাকার মতো সাহায্য । কিন্তু সবার আপ্রাণ চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে যায়। বাঁচানো যায়নি থৈবিকে। ভিন রাজ্যের হাসপাতালে গত ১৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় থৈবির।তারপর মাত্র ১৭ দিন। শুক্রবার বেরোয় ২০২৫ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট। তাতে দেখা যায় থৈবি তার স্কুলের সবার সেরা। পেটে ব্যথা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পরেও তা সাফল্য একটুও ফিকে হয়নি।
সে বাংলায় পেয়েছে ৯৯, অংকে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৫ ও ভূগোলে ৯৫। রেজাল্ট হাতে নিয়ে চোখের জল যেনো বাঁধ মানতেই চাইছেন পরিবারের সদস্যদের।আর থৈবির স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বা টিচার ইনচার্জ পাপড়ি বন্দোপাধ্যায় বলেন, কি বলবো? বুঝে উঠতে পারছিনা। খুবই খারাপ ও দুঃখের। ও যে ঐ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে ৬৭৪ নং পেয়েছে, তা অন্য কেউ হলে পারতো না। আর সবার মুখে একটাই কথা।” থৈবি সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে রাজ্যের ১০ জনের মধ্যে অনেক উপরে থাকতো” । কেন এটা হবে না। পড়াশোনা থেকে বাকি সব হবিতে তো সে সবার সেরা।