আসানসোল আরপিএফ ও রেল পুলিশের অপারেশন আহট” অভিযান, কাজের নাম চেন্নাইয়ে পাচারের অভিযোগ, ১১ জন নাবালক উদ্ধার, ধৃত ৫
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ভারতীয় রেলের অন্যতম উদ্যোগ অপারেশন ” আহট ” (মানব পাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ) । এর মাধ্যম মানব পাচারের বিরুদ্ধে আরপিএফ নিরলস অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে কৌশলগত রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ২০২২ সালে চালু হওয়া অপারেশন ” আহট” রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী বা আরপিএফ দ্বারা পরিচালিত হয়। যার লক্ষ্য রেলকে ব্যবহার করে পাচারের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের, মূলতঃ নারী ও শিশুকে সনাক্ত, উদ্ধার এবং পুনর্বাসন করা। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং এনজিওগুলির সাথে সমন্বয় রয়েছে। যাতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যায় এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।




অপারেশন ” আহট ” র অধীনে বুধবার আরেকটি বড় সাফল্য পেয়েছে আসানসোল ডিভিশনের রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী। আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ একটি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় ও ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১১ জন নাবালককে উদ্ধার করে। এর ফলে মানব পাচারের বড় ঘটনা আটকানো সম্ভব হয়েছে। বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ আসানসোলের সিকিউরিটি কন্ট্রোল থেকে খবর পেয়ে আসানসোল রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের ওয়েস্ট পোস্ট ও আসানসোল রেল পুলিশ বা জিআরপির একটি দল আসানসোল স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসা ১২৩৭৬ নং তাম্বারাম সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (জসিডি থেকে তাম্বারাম) ট্রেনের জেনারেল কোচ ( নম্বর ২৪৬৯৫৪সি ও ১৯২৩১৭সি) অভিযান চালায়।
এই অভিযানের সময়, আরপিএফ ও রেল পুলিশে দলটি সন্দেহজনকভাবে বসে থাকা ১১ জন নাবালককে শনাক্ত করে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের নাম ও ঠিকানা জানায়। যা দেখে বোঝা যায় তারা ঝাড়খণ্ড, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তারা আরো বলে যে, পাঁচজন ব্যক্তি চেন্নাইতে লাভজনক কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাচ্ছে। মুলতঃ এই নাবালকদের পরিবারের দুর্বল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।
সেই সময় সেই পাঁচজন অভিযুক্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নাবালকেরা তাদের শনাক্ত করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, আর্থিক অসুবিধার জন্য তাদের বাবা-মা কাজের জন্য পাঠাতে রাজি হয়েছে। এরপর সেই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের নাম হলো ঝাড়খণ্ড গিরিডির দীপক কুমার দাস (১৮), পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বিশ্বনাথ দোলুই (২৫), ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের উমেশ পাহাড়িয়া (২৪), বিহারের জামুইয়ের রাজেশ মাঝি (২৯) ও রাধে মাঝি (২৪)। গ্রেফতার করা ৫ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), কিশোর বিচার (শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৫ এবং শিশু শ্রম (নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮৬ এর প্রাসঙ্গিক ধারার অধীনে জিআরপিএস/আসানসোলে একটি মামলা (নং ৩৫/২৫ তারিখ ১৪.০৫.২০২৫) নথিভুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা নাবালকদের পরামর্শ এবং পুনর্বাসনের জন্য আসানসোলের রেল শিশু সহায়তা ডেস্কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ধৃতদেরকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।