ASANSOL

বাজ পড়ায় গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ বছরে, গাছ এবং বাড়িতে সঠিক আর্থিং না থাকায় এই সমস্যা ছড়াচ্ছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য। আসানসোল। পশ্চিম বর্ধমান জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বজ্রপাতের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ক্ষতির সংখ্যাও বাড়ছে ।একইভাবে রাজ্য সরকারেরও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে মেরামত করতে এবং যে সময় বিদ্যুৎ থাকছে না তার জন্য রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে যেখানে তালগাছ, ইউক্যালিপটাস বা এই ধরনের বড় বড় উঁচু গাছ আছে সেখানে কিন্তু বাজ পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। যেসব জায়গায় বাড়ির উপরে আবার টাওয়ার লাগানো হচ্ছে সেখানে সঠিকভাবে আর্থিং না থাকায় সেই অঞ্চলেও বাজ পড়ার পরিমাণ বাড়ছে বলে বিদ্যুৎ দপ্তরের কাজের সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।


যেমন সালানপুরের রূপনগরে কিছুদিন আগেই ভয়ংকর বাজ পড়ে একটি দোতলা বাড়ির ছাদের কিনারা ভেঙে সেই বাজের ছলকা ঘরের ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে উপরতলা থেকে নিচের তলায় পৌঁছয় এবং ঘরের সুইচ বোর্ড থেকে শুরু করে পাখা জ্বলে যায়। ফ্রিজ ,টিভি পুড়ে যায়। বাসিন্দাদের অবশ্য ক্ষতি হয়নি। আবার গত সপ্তাহে সালানপুর ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় যে ভয়ংকর বাজ পড়েছিল তাতে অন্তত আট দশটি বাড়ি ফ্রিজ এবং টিভি নষ্ট হয়েছে বলে সেখানকার এইসব কাজের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী বুবাই চন্দ্র জানান। ঠিক একইভাবে ঐদিনই প্রায় আড়াইশো সার্কিট কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তারে বেশ কিছু অংশে বাজ পড়ায় আগুন লেগে ছিঁড়ে যায় ।বেশ কিছু সংখ্যক বিদ্যুৎ লাইনের পিন এবং ডিস্কের ক্ষতি হওয়ায় কোথাও কোথাও আট ঘন্টা কোথাও কোথাও ১২ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। আসানসোল শহরে প্রায় সাড়ে ৩০০ সার্কিট কিলোমিটার জুড়ে রক্ষণাবেক্ষণ করেন গত ৩০ বছর ধরে সব্যসাচী রায় নামে এক ঠিকাদার বলেন গত কয়েক বছরে সালানপুর বারাবনি থেকে শুরু করে এমনকি আসানসোলেও বাজ পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

তবে এক পলিটেকনিকের অধ্যাপক জানান যে হারে বিদ্যুৎ দপ্তর গুলির পোলগুলিতে আর্থিং থাকা উচিত তা নেই দ্বিতীয়ত চিনামাটি বা পরসোলিন অথবা পলিমারের ডিস্ক আজকাল ব্যবহার করা হচ্ছে তা আরও উন্নতমানের হওয়া উচিত। অন্যদিকে চিনামাটির ডিস্কে বাজ পড়ে হেয়ার ক্র্যাক হলে তা সহজে খুঁজে বার করা যায়। ফলে মেরামত করতে সময় কম লাগে ।পলিমারের ডিস্কের ক্ষেত্রে বাজ পড়ে যে ফাটল হয় তা খুঁজে বের করা কঠিন হয়। তিনি বলেন বাজে একদিকে যেমন গ্রাহকদের নানান বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় তেমনি সরকার যদি ঘন্টার পর ঘন্টা কোথাও বিদ্যুৎ বন্ধ রাখেন সে ক্ষেত্রে তাদেরও রাজস্বের ক্ষতি হয়।

দীর্ঘদিন বিদ্যুতের যন্ত্রপাতির মেরামত এবং সংস্কারের কাজের সাথে যুক্ত কর্মী বিকাশ চক্রবর্তী বলেন প্রতিটা বাড়ি বা আবাসনে সঠিকভাবে আর্থিং করা উচিত। এমনকি বিদ্যুতের খুটি গুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে সত্যিই যেসব অঞ্চলে উচু গাছ আছে বা টাওয়ার সেখানেই আমরা গত কয়েক বছরে দেখছি বাজ পড়ার পরিমাণ বেড়েছে। উঁচু গাছে যখন বাজ পড়ে তখন তা একেবারে ক্রমশ মাটির নিচে পর্যন্ত চলে যায়। এবং অনেকটা জায়গা জুড়ে তার প্রতিফলন ঘটে। ফলে সেখানে কেউ থাকলে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। প্রায় একটা বাজ পড়লে সাধারণত ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট বা ৩০ হাজার অ্যাম্পয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাড়ির ক্ষেত্রে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় মাত্র ২০২০ ভোল্টে।


যদিও রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার পশ্চিম বর্ধমান জেলার রিজিওনাল ম্যানেজার সোহেল হোসেন বলেন আমরা যাতে বাজ না পরে তার জন্য লাইটনিং অ্যারিস্টারের যে ব্যবস্থা সেটা করে রাখি ।আর যখন বাজ পড়ে বিদ্যুতের তার পুড়ে যাওয়া বা ডিস্ক নষ্ট হওয়ার কোন ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করি দ্রুত মেরামত করতে। অবশ্যই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথেই যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন বাজ পড়ার আগেই যেহেতু প্রাক ঘোষণা অধিকাংশ সময় থাকে সেই জন্য প্রথমেই ঘরের সমস্ত বিদ্যুৎ ব্যবহৃত জিনিসগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা উচিত। টিভি ,ফ্রিজ, সিসিটিভি ,এসি এমনকি যদি মোবাইল চার্জে দেয়া থাকে তাও বন্ধ করা উচিত। দ্বিতীয়ত ইঞ্জিনিয়ারদের মতামত নিয়ে বাড়ি তৈরির পর অবশ্যই আর্থিং সঠিক করা উচিত। তৃতীয়তঃ মোবাইল বা ল্যাপটপ সেই সময় ব্যবহার না করা উচিত। ওই সময় যদি পাখা চালু থাকে তাহলে কিন্তু তা পুড়ে যাবে ।মনে রাখতে হবে বজ্রপাতের সময় ডাটা ট্রান্সমিশনও নষ্ট হতে পারে যদি ইলেকট্রিক গেজেট চালু থাকে।
আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন এই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা বিদ্যুৎ দপ্তরের সমস্ত আধিকারিকদের নিয়ে আলাদা করে ওই বিষয়ে কথা বলব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *