আসানসোল পুরনিগমের পার্কের গেটে তালা, পুনর্বাসন নিয়ে ডেপুটি মেয়রকে আক্রমণ, বিতর্কে আইএনটিটিইউসি নেতা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল শহরের জিটি রোডের চেলিডাঙ্গার অদুরে সেন্ট জোসেফ স্কুলের সামনে পুরনিগমের একটি পার্কে দোকান করতে দেওয়া নিয়ে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন মাত্রা পাচ্ছে।বুধবার সকালে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া বেশ কিছু দোকানদারের সাথে নিয়ে আসানসোলের জিটি রোডে আসানসোল পুরনিগমের ঐ পার্কের গেটে তালা লাগিয়ে দেন।




এই প্রসঙ্গে রাজু আলুওয়ালিয়ার বলেন, ২ বছর আগে আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষ এই পার্কের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা দোকানদারদের সরিয়ে দেয়। এখানে ৪১ জন দোকানদার ছিলেন। তাদেরকে বলা হয়েছিলো পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে এখানে অর্থাৎ পার্কের মধ্যে দোকান করতে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগেই আমরা এর বিরোধিতা করেছি। কেন সেখানে একজন মাত্র জায়গা পাবে?
তখন আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেছিলেন যে তাকে পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। রাজু আলুওয়ালিয়া স্পষ্টভাবে বলেন, যে এটি ওয়াসিমুল হকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে তিনি তার ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। পুনর্বাসন দিতে হলে সকলকে পুনর্বাসন দেওয়া উচিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই একজন ছাড়া কাউকে পুনর্বাসন করা হয়নি। সেই ব্যক্তিও আসানসোলের নন। তিনি নিয়ামতপুরের বাসিন্দা। রাজু প্রশ্ন তুলে বলেন, ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হককে উত্তর দিতে হবে যে নিয়ামতপুরের একজন ব্যক্তিকে পুনর্বাসনের প্রয়োজন কেন ছিল? বাকিদের কেন পুনর্বাসন করা হয়নি?
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষকেও উত্তর দিতে হবে যে কেন একজন ছাড়া বাকিদের পুনর্বাসন হিসেবে দোকান দেওয়া হয়নি। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের নামে যাকে এখানে দোকান দেওয়া হয়েছে, সে এখানে ব্যবসা করছেন। তাহলে বাকি দোকানদারদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? এখানে দুবছর আগে দোকান করে ব্যবসা করা বেশ কিছু দোকানদার বলেন, ২ বছর আগে যখন আমাদের দোকান ভেঙে ফেলা হয়, তখন তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র একজনকে এখানে দোকান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, যখন আমাদের দোকানে তালা পড়েছে, তখন আমরা এখানে থাকা একটি দোকানের গেটে তালা দিয়েছি।
এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন , গোটা রাজ্যে যা ঘটছে, আসানসোলেও তা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এমন ঘটনা সামনে আসছে। তিনি বলেন, রাজু আলুওয়ালিয়া মন্ত্রীর অনুগামী নেতা। তিনি মেয়রের বিরোধিতা করছেন। কিছুদিন আগে আসানসোল পুরনিগমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে হটন রোড দখলমুক্ত করা হবে। মেয়রের নেতৃত্বেও প্রচারও চালানো হয়েছিলো। কিন্তু তা করা হলোনা শেষ পর্যন্ত। এখানে মন্ত্রী এবং মেয়রের লবির মধ্যেকার লড়াই। যার ফল আসানসোলের জনগণ ভোগ করছেন।
এই বিষয়ে ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেন , কে কি বলছে তার উত্তর দেওয়ার জন্য আমি তো বসে নেই। বাংলায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসে গণতন্ত্র আছে। তাই সবারই তাদের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। তবে আমি অপ্রয়োজনীয় অভিযোগের উত্তর দেবেন না। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমাকে আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন, সেদিন তিনি পদত্যাগ করবো। ওয়াসিমুল হক স্পষ্ট করে বলেছেন, আমি আগের বোর্ডে পদে ছিলেন না। অভিজিৎ ঘটক আগের বোর্ডে ছিলেন। তখন ২১ জন দোকানদারের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সার্কিট হাউসের কাছে দোকানদারদের দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল সেই দোকানদারদের সাথে কথা বলে। পূর্ববর্তী বোর্ডের আমলে এটি ঘটেছিল। তখন আমি এই পদে ছিলেন না।
যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তার দলেরই শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া তার নামে পার্ক নিয়ে অভিযোগ করছেন, তখন ওয়াসিমুল হক এর সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেন, দলীয় নেতৃত্ব এই বিষয়টি খতিয়ে অবশ্যই দেখবে। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, আরেক ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় , সমস্ত মেয়র পারিষদ ও পুরো বোর্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে আসানসোলে উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। এখন যদি কেউ এই উন্নয়নমূলক কাজের বিরোধিতা করে, তাহলে বোঝা যাবে যে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করছেন। তাই, আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাইনা। তিনি বলেন, শুধু অভিযোগ করা যথেষ্ট নয়, এর সমর্থনে তথ্য থাকা প্রয়োজন। তবেই তা সবার কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে।