সেল আইএসপি কর্মী বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেফতার, ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর ও আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ বার্নপুর সেল আইএসপি বা ইস্কো কারখানার কর্মী বাংলাদেশের নাগরিক ! সুশান্ত বিশ্বাস নামে ঐ বাংলাদেশিকে শুক্রবার রাতে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের হিরাপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে আসানসোলের হিরাপুর থানার অন্তর্গত বার্নপুরের নিউ টাউন ৮ নম্বর বস্তি সংলগ্ন ছোটদিঘারি আবাসন থেকে । ঐ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করার পরে শনিবার পুলিশ তাকে আসানসোল আদালতে পেশ করে রিমান্ড বা হেফাজতের আবেদন করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের বিচারক তার জামিন নাকচ করে ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।




হিরাপুর থানার ওসি তন্ময় রায়ের নেতৃত্বে এসআই অঞ্জন মন্ডল ও শুভাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় ( মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও) সহ একটি দল এই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে । জানা গেছে, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসবি বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ এফআর বা ফরেনার্স রেজিস্ট্রার অফিস সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়ার পরে হিরাপুর থানারসুশান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতে হিরাপুর থানার পুলিশ বিএনএস বা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার দুটি ধারা এবং বিদেশী সংশোধনী আইন ২০০৪ এর ১৪এ(বি) নং ধারায় মামলা দায়ের করে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে হাজির করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সুশান্ত বিশ্বাস বার্নপুর সেল আইএসপি বা ইস্কো কারখানার একজন কর্মী। তিনি ছোটাদিঘারির কোয়ার্টার বা আবাসন নং আরডি ৮ই ৫/২ এ থাকতেন। যিনি গোপনে বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে বসবাস করছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুশান্ত বিশ্বাস ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ থেকে গোপনে ভারতে এসেছিলেন। যখন তার বাবা-মা দুজনেই বাংলাদেশে থাকতেন। তার ভাই দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস এখনও বাংলাদেশের পণ্ডিতপুর গ্রামে থাকেন। যেখানে তার পৈতৃক নিবাস।
সীমান্ত পার করার পর, তিনি তার বোন বাসনা বিশ্বাসের বাড়িতে কেসাইপুর গ্রামে, ডাকঘর-চূর্ণী, রঘুনাথপুর, থানা-ধনতলা, জেলা-নদিয়ায় ছিলেন । এরপর, তিনি ১৯৯০-৯১ সালে একটি জাল চতুর্থ শ্রেণীর সার্টিফিকেট তৈরি করেন এবং ১৯৯১ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি পরে স্নাতক এবং আইটিআই প্রশিক্ষণ পর্যন্ত তার পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে তিনি কেসাইপুর ঠিকানায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড (নম্বর এমটিএম২৪৮৭৯২৬) সংগ্রহ করেন। ২০২১-২২ সালে সেই ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ডগুলি আসানসোলের ঠিকানায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তিনি সমস্ত শিক্ষাগত কাগজপত্র এবং জালিয়াতি করে প্রাপ্ত নথি জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন।
সুশান্ত বিশ্বাস যখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন তখন তার বৈধ প্রবেশের কোনও প্রমাণ নেই। তাই তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক, ভারতীয় নাগরিক নন।এখন পুলিশ নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে যে গ্রেফতার হওয়া এই ব্যক্তি কি বৃহত্তর কোনও নেটওয়ার্কের অংশ ছিল? নাকি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সে অবৈধভাবে বসবাস করছিল।পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, তদন্তের সময় তার কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্র পরীক্ষা করবে এবং সে কতদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছিল তাও খুঁজে বার করা হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসকারী অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪ দিনের রিমান্ডের সময় পুলিশ এই মামলায় আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবে বলে আশা করছে। যা পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।