আসানসোলের বিভিন্ন ব্লক এবং পুরসভায় বৃদ্ধ ভাতার জন্য প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ বছরে পর বছর ঘুরলেও না পাচ্ছেন ভাতা, না করা যাচ্ছে নতুন আবেদন
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ।আসানসোল। আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন ব্লক এবং পুরসভা এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বৃদ্ধ পেনশনের জন্য ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আবেদন জমা দিলেও সেই ভাতা আজও পাননি। ফলে তারা সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারণ নতুন করে তারা দুয়ারে সরকারে বা সরকারি অফিসে গিয়ে আবেদন করতে চাইলেও সেই আবেদন পোর্টাল নিচ্ছে না। পোর্টালে দেখানো হচ্ছে ইতিমধ্যে আবেদন করা আছে। এর ফলে তারা আরো বড় সমস্যায় পড়েছেন।সালানপুর ব্লকে রূপনারায়নপুরের বাসিন্দা ৮১ বছরে অধীর কুমার লাহা বর্তমানে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত বলে জানান ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি গোপাল মিশ্র।




গোপাল বাবু বলেন উনিও দীর্ঘদিন আগেই বৃদ্ধ ভাতার জন্য আবেদন করেছেন ।আমরা চেষ্টা করেও নতুন করে তার আবার আবেদন করাতেও পারছিনা। এই মুহূর্তে ওনার ওই আর্থিক সাহায্য হলে তিনি চিকিৎসার জন্য সেই টাকা কাজে লাগাতে পারতেন । সোমবার সালানপুর ব্লকের বিডি অফিসে হাজির হয়েছিলেন ফুলবেড়িয়া বোলকুন্ডা পঞ্চায়েতের বোলকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা কিরণ রায়। তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতির কাছে এদিন দুটি আবেদন পত্র দেখিয়ে জানান তাদের পরিবারেরই বৃদ্ধা, অসুস্থ বিছানায় থাকা ৮২ বছরের জোসনা রায় ২০২২ সালের ২০ শে জুলাই আবেদন করেছিলেন বৃদ্ধ ভাতার জন্য। তখন তা গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর ৮ থেকে ১০ বার তারা খোঁজ নিয়েছেন কিন্তু কোনও ইতিবাচক উত্তর মেলেনি।
এই বিষয়টি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৈলাস পতি মন্ডল সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিককে ডেকে পাঠান এবং খোঁজ নেন।ঐ আধিকারিক জানান গত তিন বছরে এইরকম এক হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আবেদন তাদের পোটালে জমা পড়ে আছে। কিন্তু তাদের আবেদন গ্রহণ করে অর্থ দেয়া যায়নি। আবার এইসব ব্যক্তিরা যখন নতুন করে আবেদন করতে আসছেন তখন পোর্টালে তা নিচ্ছে না ।সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সভাপতি এবং সহ-সভাপতি বিডিওর কাছে জানান। বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস বলেন আমরা বিষয়টি আমাদের উচ্চপর্যায় জানিয়েছি।জামুরিয়ার বাসিন্দা এবং আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিসদ সদস্য সুব্রত অধিকারী বলেন বীজপুরের প্রবোধ গাঙ্গুলী একইভাবে দু বছর আগে আবেদন করলেও তারও হাতে টাকা এসে পৌঁছয়নি। এরকম দু একজন নয় শত শত মানুষ আছেন।
রানীগঞ্জের বাসিন্দা স্বপন দাসের পরিবারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে তারাও ২০২৩ সালে আবেদন করে এখনো বৃদ্ধ ভাতা পাননি। আবার নতুন করে আবেদন করতে পারছেন না। আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন যতদূর আমি শুনেছি পুরসভা এলাকার মধ্যেই এমন প্রায় ১৫ ,১৬ হাজার মানুষ আছেন যারা আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের হাতে এখনো বৃদ্ধ ভাতা পৌঁছয়নি। এদের মধ্যে অনেকেই দুয়ারে সরকারে আবেদন করতে গিয়েও সেখানেও নতুন করে আবেদন করতে পারছেন না।
আসানসোলের মহকুমা শাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন শুধু আমাদের মহকুমা বা পুরসভায় নয় সমগ্র জেলা জুড়েই এই সমস্যা আছে। জেলার পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলা শাসক রাজ্য স্তরেও জানিয়েছেন। যারা তপশিলি জাতি বা উপজাতি অথবা জয়জোয়ার প্রকল্পের আওতায় পড়েন তারা তাদের আবেদন করতে পারেন। কিন্তু সাধারনের জন্য সেই আবেদন করতে গেলেই পোর্টাল সেই আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে তার আবেদন আগে থেকে করা আছে। আমাদের আশা রাজ্য স্তরে থেকেই এই সমস্যা দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা হবে। এক্সক্লুসিভ