আসানসোল ও দুর্গাপুরে সমর্থনকারী ও বিরোধীরা মুখোমুখি, উত্তেজনা
দুই শিল্পাঞ্চলে সাধারণ ধর্মঘটে পাওয়া গেলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ দেশের একাধিক কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও গণসংগঠন শ্রম কোড বাতিল সহ বিভিন্ন দাবিতে বুধবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলো । বাংলার বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি সকাল থেকে আসানসোল শহরের জিটি রোডে সিপিএম সহ বামপন্থী নেতা ও কর্মীরা নেমে ধর্মঘট সফল করার চেষ্টা করেন। তারা সিটি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস সহ বিভিন্ন গাড়ি আটকান। এর পাল্টা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে কর্মীরাও রাস্তায় নেমে আসেন। তারা ধর্মঘটের বিরুদ্ধে স্লোগানও দিতে থাকেন। বলতে গেলে, দুই দলের কর্মীরা সেই সময় মুখোমুখি হয়ে যান। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাদের মাঝখানে ছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। কোনমতে পুলিশ দুই দলের কর্মী ও সমর্থকদের দূরে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরপরে জিটি রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।




রাজুআলুওয়ালিয়া এই বিষয়ে বলেন, ৩৪ বছর ধরে বামপন্থীরা এই রাজ্যে কোনও কাজ করেনি। কিন্তু আজ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এখানে একটি সফল সরকার চলছে, তখন বামপন্থীরা আবারও এখানে অশান্তি ছড়াতে চাইছে। যা কখনই সহ্য করা হবে না। তিনি আরো বলেন, এদিনের ধর্মঘট সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। বাস চলছে, ট্রেন চলছে, দোকানপাটও খোলা আছে। মানুষ এই সাধারণ ধর্মঘটকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি বিজেপির বি টিম।
পাল্টা জবাবে সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন , যেসব বিষয় ও দাবির জন্য এদিন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তার প্রতি জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস তাদের গুন্ডাদের মাঠে পাঠিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনও তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাদের উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, যদি ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে পুলিশই করবে। এই তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা কারা? এদিকে, এটাও দেখা গেছে যে, বনধ সফল করার চেষ্টা করা বামপন্থী কর্মীদের সাথে রাজু আলুওয়ালিয়া এবং তার সহযোগীদের উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয়।
অন্যদিকে, এদিন ইন্ডিয়ান জুডিশিয়াল এমপ্লয়িজ কনফেডারেশন অনুমোদিত ওয়েষ্ট বেঙ্গল কোর্ট এমপ্লয়িজ এ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এদিন আসানসোল জেলা আদালতের কর্মচারীরা একদিনের ধর্মঘট পালন করেন। তাপস কুমার চক্রবর্তী নামে এক কর্মী এই প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৫ সালে রাজ্য সরকারের আনা সরকার নিজেই আদালতের আইন বা কোর্ট রুল আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গেছে। এর সাথে তিনি বলেন যে, আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে সরকারি কর্মচারীদের ২৫% ডিএ দিতে হবে। কিন্তু এখনও তা দেওয়া হয়নি।
এর সাথে তিনি বলেন যে, মেদিনীপুরের আদালতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধভাবে নাজির বাবু প্রদীপ জানাকে হাজতে রেখেছিলেন। এর বিরোধিতা করা হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এই সমস্ত বিষয়ের বিরুদ্ধে এদিন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়কে এদিনের ধর্মঘট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আসানসোল পুরনিগমে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। এখানে সকল কর্মচারী কাজে এসেছেন। ধর্মঘটকারী সংগঠনের সাথে যুক্ত মাত্র ৬ জন কর্মচারী আসেননি। মেয়র বলেন, ২০১১ সালের আগে, এইসব লোকেরাই রাজ্যে ধর্মঘটের রাজনীতি করে রাজ্যকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনছেন। কিন্তু যারা ধর্মঘট ডাকছেন তারা এটি চান না। তাই তারা ধর্মঘটের রাজনীতি করছেন, কিন্তু রাজ্যের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অন্যান্য জায়গার মতো এদিন আসানসোল শহর সহ শিল্পাঞ্চলে সব ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিলো। অন্য রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে গেলে সবই খোলা ছিলো। হাজিরা ছিলো অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক। আসানসোলের মতো, শিল্পাঞ্চলের রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি, কুলটি, বরাকর, বার্নপুর, চিত্তরঞ্জন ও সালানপুরে এদিনের ছবিটা একই রকমের ছিলো। পূর্ব রেলের তরফে বলা হয়েছে, আসানসোল ডিভিশনে ট্রেন চলাচলে এদিন সাধারণ ধর্মঘটের কোন প্রভাব পড়েনি।
অন্যদিকে, এদিন সকালে দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে বনধ সমর্থনকারী বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর বেশ কয়েকজন কর্মী ও সমর্থক বাস বন্ধ করতে আসেন। সেই সময় সেখানে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা তাদেরকে বাধা দেয়। শুরু হয় দু দলের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দুপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আসানসোলের মতো ইস্পাত নগরী দুর্গাপুরে এদিনের ধর্মঘটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ধর্মঘট ডাকা ট্রেড ইউনিয়ন ও গণসংগঠনের নেতাদের দাবি, সফল হয়েছে এদিনের ধর্মঘট।