ধৃত মুল অভিযুক্তকে নিয়ে ঘটনার ” পুনর্নির্মাণ ” করলো পুলিশ
বেঙ্গল মিরর, কুলটি, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* জমি ব্যবসায়ীর অফিসে কর্মরত জামুরিয়া থানার নিঙ্গার বাসিন্দা দেবজ্যোতি শর্মা খুন কান্ডের মূল অভিযুক্ত রূপনারায়ণপুরের রাহুল মাজি ও হত্যায় ব্যবহৃত স্কুটি নিয়ে মঙ্গলবার ঘটনার পূনর্নির্মান বা রিকনস্ট্রাকশন করলো কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ। ত্রিকোণ প্রেম থেকে বিবাদ বা সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণেই গত জুন মাসের প্রথম দিকে এই খুনের ঘটনা ঘটেছিলো।সোমবার সকালে আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই জানিয়েছিলেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি ( পশ্চিম) সন্দীপ কাররা।




ঘটনার একমাসেরও বেশি সময় পরে গলা কেটে এই খুনের ঘটনায় মুল অভিযুক্ত বা মাস্টার মাইন্ড হিসেবে গত ১০ জুলাই রাতে গ্রেফতার হয় রাহুল মাজি। বর্তমানে সে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছে। তাকে জেরা করে এই খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত তার স্কুটি উদ্ধার করা হয়েছে। একইসাথে একটা পুকুর থেকে পাওয়া গেছে খুনে ব্যবহার করা ছুরি। ডিসিপি ( পশ্চিম) আরো বলেন, এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে ধৃত রাহুলের দুই বন্ধু। তাদের খোঁজ চলছে। পুরো পরিকল্পনা করেই এই খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, গত ৪ জুন রাতে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কুলটি থানার সীতারামপুর-এথোড়া রোডে এক যুবকের গলাকাটা দেহ উদ্ধার করেছিলো কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ । এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিলো গোটা এলাকায়। মৃত যুবকের পরিচয় জামুরিয়া থানার নিঙ্গার বাসিন্দা দেবজ্যোতি শর্মা বলে পরে জানা যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি মোটরবাইক উদ্ধার করেছিলো, যা মৃত যুবকেরই ছিল। আরো জানা গেছিলো, দেবজ্যোতি সিং ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে এক জমি ব্যবসায়ীর অফিসে কাজ কাজ করতো। সেদিন রাতে সেই অফিস থেকে কাজ শেষ করে পুরুলিয়া গেছিলো। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সে দুষ্কৃতিদের হামলার মুখে পড়ে।
এই ঘটনায় পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ করে বলা হয় যে দেবজ্যোতিকে খুন করা হয়েছে। নিয়ামতপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পাম্মি শর্মা নামে এক যুবতীকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে গত ১২ জুন।এরপর নিয়ামতপুর ফাঁড়ি পুলিশ সেই খুনের ঘটনায় সিডিআর ডিটেলস এবং সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরে আরো তদন্ত করে রাহুল মাজি এক যুবককে আটক করে। দীর্ঘ জেরা করে রাহুলকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। রাহুল সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা।পুলিশ সূত্রে জানা গেছিলো,ধৃত রাহুল মাজি মুল অভিযুক্ত বা মাস্টার মাইন্ড।
নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে দীর্ঘ জেরা করার পর তার কথায় অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১১ জুলাই শুক্রবার এই খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত রাহুল মাজিকে আসানসোল জেলা আদালতে পাঠানো হলো। পুলিশ ধৃতকে ৭ দিনের হেফাজত নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলো। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক, তার জামিন নাকচ করে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলো। সোমবার ধৃতকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ডিসিপি ( পশ্চিম) বলেন, এর আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া পাম্মি শর্মা। তার সঙ্গে খুন হওয়া দেবজ্যোতি শর্মা ও ধৃত রাহুল মাজির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলো। দুজনের সঙ্গে সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো ও কথা বলতো। খুন হওয়া যুবকের মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঐ যুবতীকে গ্রেফতার করা হয়। এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এই যুবতী দেবজ্যোতিকে খুন করতে রাহুলকে চাপ দিয়েছিলো কিনা।এদিন, ধৃত রাহুল মাজি পুলিশের তদন্তকারী অফিসারের সামনে স্কুটি চালিয়ে দেখায় যে, সে সেদিন কি করে গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছিলো। পুলিশ তদন্তের জন্য ও প্রমাণ হিসেবে গোটা পুননির্মাণটি ক্যামেরা বন্দী করে।