ASANSOL

আসানসোলে পথ দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা, ভাঙচুরের অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ( Asansol Latest News Updates ) পথ দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো। অভিযোগ, মৃত যুবকের পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগ লাগোয়া মৃতদেহ রাখার ঘরে ভাঙচুর চালায়। হামলা চালিয়ে ঐ ঘরের কাঁচের দরজা ভেঙে দেওয়া হয়। ব্যাহত এমারজেন্সি বিভাগের স্বাভাবিক কাজ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রাতে এমারজেন্সি বিভাগে ডিউটি করা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এই ঘটনার পরে, তারা রাতের শিফটে ডিউটি করা নিয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে এমারজেন্সি বিভাগের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। একইভাবে, হাসপাতালের ফেসিলিটি ম্যানেজারের তরফে সুপারকে লিখিত জানানো হয়েছে। এরপরে সুপার আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রসঙ্গতঃ, আসানসোল জেলা হাসপাতালে এমারজেন্সি বিভাগের বাইরে পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। তারপরেও কি করে এই ঘটনা ঘটলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার ডামরা কোলিয়ারির বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম অভিজিৎ হাঁড়ি ( ৩৭)। এই পথ দুর্ঘটনায় একটি মোটরবাইকে থাকা মৃত যুবকের দুই সঙ্গী আহত হয়েছে। তারা আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিন দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। এদিকে, মৃত যুবকের পরিবারের তরফেও বৃহস্পতিবার আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত বারোটা নাগাদ জামুড়িয়ার গুঞ্জন ফ্যামিলি রেস্তোরাঁয় আমন পাসোয়ান নামে এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি থেকে মোটরবাইকে তিন যুবক অভিজিৎ হাঁড়ি, মনোজ কুমার কেওট ও জাভেদ আনসারি আসানসোলের ডামরা কোলিয়ারি এলাকায় তাদের বাড়িতে ফিরছিলেন। আসানসোলের ১৯ নং জাতীয় সড়কে কালিপাহাড়ি এলাকায় দ্রুতগতিতে আসা একটি চারচাকা গাড়ি তাদের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। তাতে তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়ে ও গুরুতর জখম হন। তিনজনকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে অভিজিৎ হাঁড়িকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, অন্য দুই মোটরবাইক আরোহী মনোজ কুমার কেওট এবং জাভেদ আনসারি গুরুতর জখম অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার খবর পেয়ে মৃত ও আহত যুবকদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ডামরা কোলিয়ারি এলাকার শতাধিক মানুষ জেলা হাসপাতালে চলে আসেন।

সেই সময় সেখানে ছিলেন মোটরবাইকে ধাক্কা মারা চারচাকা গাড়ির মালিক তথা চালক। তাকে ধরে মৃত যুবকের পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা মারধর শুরু করেন। এর পাশাপাশি এমারজেন্সি বিভাগের পাশে মৃতদেহ রাখার ঘরের ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় সেই সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগ সংলগ্ন চত্বরে। খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী। এই ঘটনার জেরে এমারজেন্সি বিভাগে স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয়। পুলিশ বহু চেষ্টায় উন্মত্ত জনতাকে শান্ত করে, পরিস্থিতি সামাল দেয়। এদিকে, এদিন সকালে মৃত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মৃত যুবকের কাকা বলেন , আমার ভাইপো এবং তার দুই বন্ধু বুধবার রাত বারোটার সময় গুঞ্জন ফ্যামিলি রেস্তোরাঁয় জন্মদিনের পার্টি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন কালিপাহাড়ি এলাকায় দ্রুতগতিতে আসা একটি চারচাকা গাড়ি তাদের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। তাতে আমার ভাইপো মারা যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণরূপে গাড়ি চালকের দোষে হয়েছে। এর জন্য আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে, তিনি হাসপাতালে ভাঙচুরের ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।এদিকে, জেলা হাসপাতালের সুপার এদিন বলেন, আমাকে বুধবার রাতের ঘটনা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তা আমি আসানসোল দক্ষিণ থানায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।অন্যদিকে, পুলিশ জানায়, ঘাতক চারচাকা গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর জেলা হাসপাতালের ভাঙচুরের ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *