BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

রুপনারায়নপুরে অপহরণের অভিযোগ দশম শ্রেণির ছাত্রীর ৬ দিন পরেও খোঁজ নেই, মুক্তিপণ দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি বাবার

বেঙ্গল মিরর, রুপনারায়নপুর, কাজল মিত্র ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* ৬ দিন পরেও খোঁজ নেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুর ডিএভি পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর। তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে সালানপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐ ছাত্রীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ জুলাই। পরিবারের তরফে রুপনারায়নপুর ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের হয় পরের দিন ২০ জুলাই। ঐ ছাত্রীর বাড়ি সালানপুর থানার রুপনারায়নপুরের দেন্দুয়া সংলগ্ন বনজেমারি এলাকায়। ইতিমধ্যেই ছাত্রীর কাছে থাকা তার বাবার মোবাইল ফোন থেকে দাদার মোবাইলে তিন লক্ষ টাকা চেয়ে দুদিন আগে ম্যাসেজও আসে। দেওয়া হয়েছিলো কিউআর কোড। সেই কোডে ছাত্রীর বাবা ১ টাকা ও ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও ছাত্রীর কোন খোঁজ নেই।

স্বাভাবিক ভাবেই চরম দুশ্চিন্তায় ঐ ছাত্রীর পরিবার। পুলিশ তাদের মতে তদন্ত করলেও, বৃহস্পতিবার ছাত্রীর বাবা মেয়েকে ফিরে পেতে, সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য চেয়েছেন। অপহৃত ছাত্রীর বাবা ইসিএলের কর্মী জাহাঙ্গীর খান বৃহস্পতিবার বলেন, গত ১৯ জুলাই শনিবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ মেয়ে রূপনারায়ণপুরে টিউশনি পড়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়।

ইতিমধ্যে মেয়ের মোবাইল ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। টিউশনির শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি আমাকে জানান, ঐদিন ছাত্রীটি পড়তে আসেনি। এরপরেই ছাত্রীটির পরিচিত সহপাঠী এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন পরিবারের লোকজনেরা। কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারেনি। এরপরে সালানপুর থানায় বিষয়টি জানান ছাত্রীর বাবা। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘটনার তদন্তে নামে। পুলিশ দেখতে পায় ছাত্রীটির মোবাইল কিছুক্ষণের জন্য চালু হয়েছিল। সে সময় তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন আসানসোল বাস স্ট্যান্ড দেখাচ্ছিল। এরপর সকলেই দ্রুত আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ছাত্রীটির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন আসানসোল রেল স্টেশন দেখাতে থাকে। এরপর দ্রুত তারা আসানসোল রেল স্টেশনে পৌঁছে যান। কিন্তু মেয়েটির কোন সন্ধান কেউ পাননি। ‌

যদিও আসানসোল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সন্ধে ৭:১৬ মিনিটে মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। ইতিমধ্যে ছাত্রীর মোবাইল ফোন তার বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ম্যাসেজ আসে। সেই সময় তার টাওয়ার লোকেশন দেখায় মধুপুর। ‌ মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য দ্রুত কয়েকজন মধুপুর পর্যন্ত পৌঁছে যান। ‌ কিন্তু সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায় মেয়েটি প্রয়াগরাজে পৌঁছে গেছে। তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। পুলিশ ছাত্রীটিকে উদ্ধারের জন্য সমস্ত শক্তি কাজে লাগিয়েও এখনো সফল হয়নি। এদিকে, জানা যায়, অপহরণকারীরা টাকা আদায়ের জন্য কিউআর কোড পাঠিয়েছিল।

সেই কিউআর কোডে বাড়ি থেকে একবার ২ টাকা এবং আর একবার ২ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এই লেনদেন পুলিশ সূত্র হিসেবে কাজে লাগায়। সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পারে ছাত্রীটিকে প্রয়াগরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপরই দ্রুত পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে যায় কিন্তু প্রয়াগরাজে তার কোন খোঁজ না পেয়ে পুলিশ খালি হাতে ফিরে আসছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ছাত্রীটির মোবাইল ফোন খুব কম সময়ের জন্য চালু করে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে বাড়িতে। কখনো সে বলছে, বাবা তুমি কোথায়, আমাকে দ্রুত এখান থেকে উদ্ধার করো। কখনো বা অন্য কিছু কথা। এদিকে ২১ জুলাই পুলিশ টাওয়ার লোকেশন অনুসরণ করে জানতে পারে সকাল ৭টা বেজে ৩৬ মিনিটে তাকে গুজরাটের ওধনা রেল স্টেশনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আবার পরে টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী তাকে সুরাট মেডিকেল কলেজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। টাওয়ার লোকেশনের মতো অপহরণকারীরা ছাত্রীটিকে নিয়ে বারবার অবস্থান বদলাচ্ছে। এর ফলে পুলিশের পক্ষে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে আনা যথেষ্ট অসুবিধাজনক হয়ে পড়ছে।

এদিকে, ছাত্রীটির পরিজনেরা আশঙ্কা করছেন ১৯ জুলাই আসানসোল- আমেদাবাদ উইকলি ট্রেনে তাকে অপহরণকারীরা গুজরাটের সুরাটে নিয়ে চলে গেছে। সম্ভবত কোন কিছু খাইয়ে বেহুঁশ করে কিংবা প্রচন্ড ভয় দেখিয়ে অপহরণকারীরা ছাত্রীটিকে সঙ্গে নিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, পরিবারের সদস্য। এর ফলেই মাঝে মাঝে তার মোবাইল চালু হলেও কোন কিছুই সে বলার মত অবস্থায় থাকছে না। বনজেমারির বাসিন্দা ইসিএল কর্মী ঐ ছাত্রীর বাবা এবং গোটা পরিবার এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন তাদের মেয়ে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে আসে।এদিন ছাত্রীর বাবা কাঁদতে কাঁদতে হাতজোড় করে বলেন, পুলিশ তাদের সাধ্যমতো তদন্ত করছে। কিন্তু আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছি। তিনি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে কিছু একটা করুন। এদিকে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মেয়েটিকে খুঁজে বার করতে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *