আটদিন পর মহারাষ্ট্র থেকে উদ্ধার হল কিশোরী, নাটকীয় রহস্যভেদ
বেঙ্গল মিরর, কাজল মিত্র:- পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর থানার পুলিশ এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জট খুলে অবশেষে উদ্ধার করল রূপনারায়ণপুর ডিএভি স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে। মহারাষ্ট্রের নাসিকের একটি বস্তি থেকে ২৫ জুলাই তাকে উদ্ধার করা হয়।আজ,২৬ জুলাই, নাসিকের আদালতে তাকে হাজির করার পর পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আসানসোলের শিশু সুরক্ষা কমিটির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।




তদন্তে উঠে এসেছে এক অবিশ্বাস্য কাহিনি। সালানপুর ব্লকের বনজেমারি এলাকার এক ইসিএল কর্মচারীর এই কন্যা নিজেই অপহরণের এক কাল্পনিক নাটক সাজিয়েছিল। পারিবারিক কলহের জেরে ১৯ জুলাই সে নিজের ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে আসানসোল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়ে। ট্রেনে যাত্রাপথে বিহারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, যারা গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে কাজের উদ্দেশে যাচ্ছিল। তাদের কাছে নিজেকে অনাথ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে জানায়, তার কেউ নেই এবং দুঃখে সে ঘর ছেড়েছে। এই আবেগঘন কাহিনিতে বিশ্বাস করে যুবকরা তাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গেই সে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে পৌঁছায়।অপহরণের নাটককে বাস্তব রূপ দিতে মেয়েটি নিজেই বাড়িতে মেসেজ পাঠিয়ে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এমনকি ভিডিও কলে কান্নাকাটি করে এবং নিজের ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় নিজেকে অপহৃত দেখানোর নাটকও করে।
তবে কিছুদিন পর এই পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে সে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করে। এদিকে, সালানপুর থানার পুলিশ অপহরণের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে এবং উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে তদন্তকারী দল পাঠায়। মেয়েটির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে সে নাসিকে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় নাসিকের একটি বস্তিতে বিহারের কয়েকজন যুবকের ভাড়া বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।মেয়েটির বাবা শনিবার সকালে জানান, পুলিশের তৎপরতায় তিনি স্বস্তি পেয়েছেন এবং মেয়ে বাড়ি ফিরলে তিনি শান্তি পাবেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশম শ্রেণির এই ছাত্রী ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিল এবং সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। তবে উদ্ধারের সময় নাসিকে তার সঙ্গে কোনো যুবককে পাওয়া যায়নি। ১৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার নাটকীয় সমাপ্তি ঘটল সালানপুর পুলিশের কার্যকরী তদন্তের মাধ্যমে। এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চর্চার জন্ম দিয়েছে।