ASANSOL

আসানসোল আদালতে মাত্র ১৫ মাসে নজিরবিহীন রায় ঘোষণা, মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনে দোষী সাব্যস্ত বাবার মৃত্যুদন্ড

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়/সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে বিচার করে আসানসোল আদালতে বুধবার এক নজিরবিহীন রায় ঘোষণা করলেন স্পেশাল পকসো কোর্টের বিচারক সুপর্ণা বন্দোপাধ্যায়। ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনে দোষী সাব্যস্ত বাবার মৃত্যুদন্ড বা ফাঁসির নির্দেশ দিলেন বিচারক। আসানসোল আদালত সূত্রে জানা গেছে ও এই মামলার সরকারি আইনজীবীর দাবি, এই প্রথম এখানে কোন মামলার সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে দোষী সাব্যস্ত কোন আসামীর মৃত্যুদন্ডের সাজা হলো। তাও আবার মাত্র ১ বছর ৩ মাসের মধ্যে।

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্নপুরের নরসিংবাঁধের কচুবাগান এলাকার বাসিন্দা। এই মামলার সরকারি আইনজীবী বা পিপি হিসেবে ছিলেন সোমনাথ চট্টরাজ। আইও বা তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ছিলেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের হিরাপুর থানার এসআই বা সাব ইন্সপেক্টর শুভাশিষ বন্দোপাধ্যায়। হিরাপুর থানায় ২০২৪ সালের ১৪ মে মৃতার মায়ের করা একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা হয়েছিলো। গ্রেফতার করা হয়েছিলো মৃতার বাবাকে। তার বিরুদ্ধে পকসো আইনের ৬ নং( ধর্ষণ) , আইপিসি বা ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ( খুন) ২০১ নং( তথ্য প্রমাণ লোপাট) ধারায় মামলা করা হয়।

সরকারি আইনজীবি এদিন বলেন, গত সোমবার স্পেশাল পকসো কোর্টের বিচারক সুপর্ণা বন্দোপাধ্যায় আইওর দেওয়ার তথ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে ও সওয়াল-জবাব শেষে নির্যাতিতার বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এদিন সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক দোষী সাব্যস্তর বিরুদ্ধে পকসো আইনের ৬ নং ও আইপিসির ৩০২ নং ধারায় ফাঁসির নির্দেশ দেন। আইপিসির ২০১ নং ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। এছাড়াও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারক। এই জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বিচারক আরো নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে ভিকটিম কমপেনসেশান ফান্ড থেকে মৃতার মাকে ক্ষতি পূরণ হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এই মামলায় মোট ১৬ জন সাক্ষী দেন। তার মধ্যে ছিলেন মৃতার মা, বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন, হাসপাতালের চিকিৎসক, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত ( বর্তমানে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত) আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের দোষ স্বীকার ( কনফেশন) করেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালে ১২ মে রাতে অন্য দিনের মতো হিরাপুর থানার বার্নপুরের নরসিংবাঁধের কচুবাগানের বাসিন্দা ১৪ বছরের ঐ নাবালিকা বাবা, মা ও ভাইবোনের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলো। পরের দিন অর্থাৎ ১৩ মে সকালে ঘুম থেকে উঠে মা দেখেন, মেয়ের মুখ পর্যন্ত চাদরে ঢাকা। স্বাভাবিক ভাবেই তার সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চাদর সরিয়ে দেখেন, মেয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে। তার গলায় কালশিটে দাগ। নাক ও কান দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন যে, মেয়ের সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। তিনি নিজের স্বামীকে তা বলাতে, সে অনেকটা নির্লিপ্ত ও স্বাভাবিক ভাবেই বলে কাউকে বলার দরকার নেই। আমরা নিজেরা যা করার করি। সবাই জানবে, পুলিশ আসবে, আমরা ফেঁসে যাবো। কিন্তু মায়ের মন তা মানতে চায়নি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে সবাইকে ডাকেন। নাবালিকার বাবা পেশায় টোটো চালক ছিলেন। কিন্তু সে তার টোটো করে মেয়েকে নিয়ে যাননি। অন্য একজনের টোটোয় করে নাবালিকাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্তের পরে জানা যায়, নাবালিকাকে গলায় দড়ি জাতীয় কিছু চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ ১৪ মে নাবালিকার মা হিরাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি নিজের স্বামীকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। এরপর হিরাপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এদিন সরকারি আইনজীবী বলেন, এই মামলার আইও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে ধৃতর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন। নাবালিকার শরীরে এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছিলো, যেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার সঙ্গে তার বাবার ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট মিলে যায়। এছাড়াও পরে ধৃত যে দড়ির ফাঁস দিয়ে মেয়ের গলা টিপে খুন করেছিলো, তা আইও তার দেখানো জায়গা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। সরকারি আইনজীবীর দাবি, মাত্র ১ বছর ৩ মাসের মধ্যে এই মামলার বিচার নজিরবিহীন। এই প্রথম আসানসোল আদালতে কোন মামলার সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে দোষী সাব্যস্তর ফাঁসি বা মৃত্যুদন্ড হলো।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *