ASANSOL

২০০২ সালের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের সাইটে, জেলার রাজনৈতিক চাপানউতর, সাধারণ মানুষ নিজের নাম খোঁজা শুরু করলেন

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। রাজ্যজুড়ে যখন এস আই আর তথা ভোটার তালিকায় সার্বিক বিশেষ সংশোধন হওয়া নিয়ে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে সেই সময় রাজ্যের নির্বাচন দপ্তর থেকে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার কে জানিয়েছেন এসআইআর করা নিয়ে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এই এস আই আর এ বিজেপি বাংলাদেশী বা রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর নাম করে একদিকে রীতিমতো যেমন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে অন্যদিকে তৃণমূল বা সিপিএম,কংগ্রেস এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে এনআরসি করার নামে আসলে এই এস আই আর করতে চাপ দিচ্ছে।

২০০২ সালের সর্বশেষ ভোটার তালিকা কে ধরে এই এস আই আর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ২০০২ সালের ভোটার তালিকা তাদের নিজস্ব সাইটে আমজনতার জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমান সহ একাধিক জেলায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের সাইটে দেয়া হয়েছে।

Model Code Of Conduct

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে এমনকি কোন কোন সাইবার কাফেতে কিংবা রাজনৈতিক দলের দপ্তরেও দফায় দফায় মানুষের যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে বলছেন ওই তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা। যেমন এদিন বারাবনি বিধানসভার সালানপুর ব্লকের রূপনারায়নপুরের বাসিন্দা প্রতাপ পাল হন্তদন্ত হয়ে বিডিও অফিসে যান। সেখানে এক কর্মী তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেন এ নিয়ে এখনই এত উদগ্রীব হবেন না ।

শেষ পর্যন্ত প্রতাপ বাবু এক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির কাছে যান এবং ২০০২ সালে তিনি যেখানে থাকতেন সেখানকার বুথেই তার নাম খুঁজে পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়ে নিজস্ব একটি প্রিন্ট করিয়ে বাড়ি ফেরেন। আবার ওই ব্লকেরই ডি মাঝি নামে এক ভদ্রলোক ২০০২ সালে তিনি অন্য এক বাড়িতে থাকতেন এবং সেই অঞ্চলে ভোটার তালিকায় তার নাম থাকার কথা। তিনি হতাশ হয়ে ফিরে স্থানীয় তৃণমূল দপ্তরে যান ।সেখানেও তার কম্পিউটারে নাম না দেখতে পাওয়াতে তাকে বোঝানো হয় তার ভয়ের কিছু নেই তারা পাশে আছেন ।তিনি বলেন তার দুই পুরুষের জমি জমা এখানে আছে।

আরেকজন ব্যবসায়ী তার পুরনো তখন কার ঠিকানায় নাম খুঁজে পেয়ে শেষ পর্যন্ত তা প্রিন্ট করিয়ে লামিনেশন করে বাড়ি ফেরেন।একইভাবে জামুরিয়া গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা তপন বাউরী তিনিও প্রথমে ব্লক অফিসে গিয়ে বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা খুব ভালো করে বুঝিয়ে বলে দেন এখনো এই নিয়ে কোন সরকারি নির্দেশ আসেনি। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না বাড়ি চলে যান। তপনবাবুর শেষ পর্যন্ত একটি সাইবার কাফেতে গিয়ে ভোটার তালিকায় তার নাম দেখতে পান। কিন্তু তার ভাই এর নাম সেখানে নেই। তিনি বলেন সরকারিভাবে ঘোষিত হওয়ার পর আবার এসে খুঁজবো। আমরা তো সকলেই এরাজ্যের মানুষ ।

একইভাবেই দুর্গাপুরে একটি গ্রামীণ এলাকার ফ্রী প্রাইমারি স্কুলের তালিকায় এক পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই এবং তার স্ত্রীর নাম থাকলেও বাকি তিনজনের নাম না থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।আসানসোলের মহিশিলা কলোনির এক পরিবারের স্বামী স্ত্রীর নাম থাকলেও তার ছেলের নাম না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন । ওই ভদ্রলোক বলেন ছেলের নাম তুলতে গেলে তো আমাদের জন্মের সার্টিফিকেট লাগবে সেটা কোথায় পাবো। এই নিয়ে আসানসোল মহকুমার নির্বাচন দপ্তরের সাথে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোন নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি।

স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে এখনই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন আমাদের কাছেও এখনো এস আই আর এর কোন নির্দেশ আসেনি ।কিন্তু ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য আমরা আমাদের কর্মীদের নিয়ে বিধানসভা অনুযায়ী আলাদা আলাদা করে বৈঠক করছি। আমরা মানুষকে বলবো আতঙ্কিত হবেন না ।ওই ভোটার তালিকায় আপনার নাম থাকলো কিনা তা নিয়ে এত ভাবার কিছু নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল দল আপনাদের পাশে আছেন।কংগ্রেসের জেলার অন্যতম নেতা প্রসেনজিৎ পইতুন্ডী বলেন বিজেপি নিজেদের সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এইসব করাচ্ছেন। আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই ভয় পাবেন না বিভ্রান্ত হবেন না।

বিজেপির আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকার দায়িত্বে থাকা প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন ভয় বা বিভ্রান্তি আমরা ছড়াচ্ছি না। যারা এ রাজ্যের শাসকদলের দায়িত্বে আছে তারা ছড়াচ্ছে। আমরা সমস্ত ধরনের ত্রুটিমুক্ত এবং বাংলাদেশী বা রোহিঙ্গা মুক্ত একটি নির্বাচনী তালিকা কমিশনের মাধ্যমে দেখতে চাই। আর ২০০২ এর ভোটার তালিকা কে ভিত্তি বর্ষ ধরে এই কাজ হবে সেজন্যেই এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সাইটে। আমরা বলব যারা এদেশের মানুষ বা এই রাজ্যে জন্মে বড় হয়েছেন এখানেই বাস করেন তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *