ASANSOL

আসানসোলে মর্মান্তিক পরিত্যক্ত ওসিপির জলে ডুবে মৃত্যু ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ হাইস্কুলের দুই পড়ুয়ার

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ সারাদেশের সঙ্গে শুক্রবার সকাল থেকেই আসানসোল শহর তথা শিল্পাঞ্চল জুড়ে পালন করা হচ্ছিলো দেশের ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস। এরইমধ্যে আসানসোল শহরে ঘটলো মর্মান্তিক এক ঘটনা। স্কুলের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি না ফিরে , পরিত্যক্ত কয়লা খাদানে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হলো দুই পড়ুয়ার। এদিন সকাল দশটার পরে এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল উত্তর থানার কাল্লার অদূরে ইসিএলের ভানোড়া ওসিপি বা খোলামুখ খনি এলাকায়। মৃতরা হলো আসানসোল দক্ষিণ থানার এসবি গড়াই রোডের সুকান্ত ময়দান এলাকার রিষুণ প্রসাদ (১২) ও জামুড়িয়া থানার এবি পিট কোলিয়ারির অনুরাগ প্রসাদ (১৩)। দু’জনই আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া।

খবর পেয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন দুই স্কুল পড়ুয়ার বাবামা, পরিবারের সদস্য, এলাকার বাসিন্দা, সহপাঠী ও স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকরা। এমন একটা ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই শোকে ভেঙে পড়েন। এদিন দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দুজনের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপরে পুলিশ দুজনের মৃতদেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে আসানসোলের রিষুণ প্রসাদ ও জামুড়িয়ার অনুরাগ প্রসাদ নিজেদের মতো করে বাড়ি থেকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুলে গেছিলো।

স্কুলের অনুষ্ঠান শেষে তারা বাড়ি না গিয়ে সাইকেল নিয়ে সোজা চলে যায় আসানসোলের জিটি রোড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আসানসোল উত্তর থানার কাল্লার কাছে ভানোড়া খোলামুখ কয়লাখনি বা ওসিপি এলাকায়। সেখানে রয়েছে কয়েক হাজার ফুট গভীর জলে ভর্তি পরিত্যক্ত কয়লা খাদান। দুজনে স্নান করতে বা দেখার জন্য খাদানের জলে নামে। এরপরে তারা জলে তলিয়ে যায়। সেখান দিয়ে যাতায়াত করা এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পান যে, খাদানের পাড়ে একটা সাইকেল, দুটো স্কুলের ব্যাগ পড়ে আছে। কিন্তু কেউ সেখানে নেই। সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পারেন যে, কেউ জলে তলিয়ে গেছে।

এরপর খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ এলাকায় আসে। বেশ কিছুক্ষনের চেষ্টায় পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারা দুজনকে খাদানের জলের ভেতর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাদেরকে পুলিশ আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরে পুলিশ দুজনের বাড়ির ঠিকানার খোঁজ করে, তাদের বাড়িতে খবর পাঠায়। দুজনের বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে জেলা হাসপাতালে দৌড়ে আসেন।

তারা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না, দুজনে কি করে স্কুল থেকে অতোটা দূরে ঐ এলাকায় কি করে গেলো? তারা কি নিজেরাই সেখানে যায়? নাকি তাদের সঙ্গে আরো কেউ ছিলো? এদিকে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান, যে কোন কারণেই এই দুই স্কুল পড়ুয়া স্কুল থেকে ঐ খাদান এলাকায় আসে। পরে তারা খাদানের জলে ডুবে যায়। এলাকার বাসিন্দারা খাদানের পাড়ে একটা সাইকেল ও স্কুল ব্যাগ দেখে সন্দেহ করেন। তখন তল্লাশি চালানো হয় জলে। তখনই উদ্ধার করা হয় দুজনকে। এই ঘটনায় দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *