আসানসোল জেলা হাসপাতালে সাত ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ, রোগী মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ
চাকরি ও ক্ষতিপূরণের দাবি, থানায় এফআইআর
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ রোগী মৃত্যুতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলো। আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর ফাঁড়ির পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দা মৃত রোগীর নাম মঙ্গল হেমব্রম (১৭)। রবিবার সকালের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসানসোল জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ব্যাপক উত্তেজিত ছড়িয়ে পড়ে। মৃত রোগীর পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ ও একজনের চাকরির দাবিতে হাসপাতালে মৃতদেহ দেখে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা এক স্বাস্থ্য কর্মীকে মারধর করেন।




খবর পেয়ে জেলা হাসপাতালে আসেন পাঁচগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের প্রতিনিধি শুভেন্দু মন্ডল, বিজেপি নেতা অরিজিৎ রায় সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা। তৃনমুল কংগ্রেস ও বিজেপির নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ মৃত রোগীর বাবা রবি হেমব্রম সহ পরিবারের সদস্যরা জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ছিলেন ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায়ও। পরিবারের সদস্যরা সুপারকে সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ভর্তি থাকাকালীন রোগীর কোন রকম চিকিৎসা করা হয়নি। তা, হলে মাত্র কয়েকদিনের জ্বর ও পেটের ব্যথায় কেউ কি মারা যায়?
রোগীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও একজনের চাকরির দাবি করা হয়। কিন্তু সুপার তাদেরকে বলেন, সরকারি হাসপাতালের তরফে এমন দাবি নিয়ে দাবি নিয়ে কোনরকম আশ্বাস দেওয়া হয় না। তারা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। হাসপাতালের তরফে তদন্ত করে গোটা বিষয়টি দেখা হবে। কিন্তু মৃত রোগীর পরিবারের তরফে সুপারের কাছে শেষ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এরপর সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মৃতদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। হাসপাতালের তরফে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ মৃতদেহ সেই এ্যাম্বুলেন্সে তোলে। কিন্তু এরপর পরিবারের সদস্যরা আবারও বিক্ষোভও দেখানো শুরু করেন। তারা বলেন, থানায় এফআইআর করাতে হবে। তারপর তারা মৃতদেহ নিয়ে যাবেন। পুলিশ তা মেনে নেয়। এরপর সন্ধ্যে সাতটার পরে তারা মৃতদেহ নিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় যান ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট রবিবার দুপুরে বারাবনি বিধানসভার আসানসোল উত্তর থানার পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দা মঙ্গল হেমব্রমকে পেটে ব্যথা ( প্যানক্রিয়াটাইটিস) এবং চারদিনের জ্বর নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার চিকিৎসা করছিলেন ফিজিশিয়ান ডাঃ বিল্বতোষ মুখোপাধ্যায়। রবিবার সকালে সাড়ে এগারোটার সময় রোগীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা আসানসোল জেলা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন । মৃত রোগীর বাবা রবি হেমব্রম ও বেদোনি হেমব্রম অভিযোগ করে বলেন, আসানসোল জেলা হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা করা হয়নি। যে কারণে মঙ্গলের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলের মা জানান ১৫ আগস্ট মঙ্গল নিজের হেঁটে এসে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন। তার পেটে ব্যথা এবং জ্বর হয়েছিল। তবে তার শারীরিক অবস্থা এতোটা খারাপ ছিল না যে দুদিনের মধ্যে সে মারা যাবে। মঙ্গলের পরিবারের তরফে একজন সদস্যের চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। মঙ্গল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলো। সেই ছিলো তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম । এমন পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু তার পরিবার ভেসে গেলো। তাই, যতক্ষণ না একজনের চাকরি এবং ক্ষতিপূরণের দাবি মিটছে, ততক্ষণ আমরা আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাবো না । আমরা হাসপাতালে ধর্নায় বসে থাকবো। ঘটনার খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ।
পরে আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি ( সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ নস্কর, দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুণ্ডু এবং বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে।
জেলা সভাপতির সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে পরিবারের তরফে। তারা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় নি। তবে হাসপাতালের তরফে ঠিক কি কারণে ঐ রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
অন্যদিকে, পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, মৃত রোগীর পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে।