KULTI-BARAKAR

আসানসোল পুরনিগমকে আক্রমণ জিতেন্দ্র তেওয়ারির, কন্ট্রোল করছেন ইঞ্জিনিয়াররা

বেঙ্গল মিরর, কুলটি, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* আসানসোল পুরনিগম কন্ট্রোল করছেন ইঞ্জিনিয়াররা। সাধারণ মানুষের ভোট পেয়ে জিতে আসা কাউন্সিলারদের কোন গুরুত্বই নেই। আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি রবিবার কুলটি বিধানসভা কেন্দ্রের নিয়ামতপুর কেন্দ্রীয় বিজেপি পার্টি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, মেয়র, চেয়ারম্যান, ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ, বোরো চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলার সহ পুর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর বা এক্সিকিউট করবেন ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু আসানসোল পুরনিগমের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।

তার কথায়, কোন কাজ করতে হলে, তারজন্য পরিশ্রম করতে হয়। সকাল এগারোটার সময় এলাম আর, দুপুর দুটোর সময় বাড়ি চলে গেলাম। সব দায়িত্ব অফিসারদের। তাই যা হওয়ার, তা হচ্ছে। প্রাক্তন মেয়র বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে যদি সবচেয়ে বড় কোনও সাফল্য থাকে, তা হল কুলটি জল প্রকল্প। আমি যখন মেয়র হই , তখন কুলটিতে জলের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। মানুষকে প্রতিদিন পানীয়জল পেতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার আমরুত প্রকল্প শুরু করে। আসানসোল ছিল সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র পুরসভা যারা এই প্রকল্পের জন্য সেরা ডিটেইলস প্রজেক্ট রিপোর্ট বা ডিপিআর প্রস্তুত করে পাঠিয়েছিল।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, আমি আমরুত ১ এবং আমরুত ২ প্রকল্পের জন্যই ডিপিআর পাঠিয়েছিলাম। আমরুত ১ র দুটি পর্যায় ছিল। প্রথম পর্যায়ের জন্য ১৪৩ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। আমরুত ১ প্রকল্পের কাজ আমি মেয়র থাকাকালীন সম্পন্ন হয়েছিল এবং আমরুত ২ প্রকল্পের টেন্ডারের কাজও আমার আমলেই হয়েছিল। আমরুত ২ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ৪৩০০০ মানুষের ঘরে পানীয় পৌঁছে যেতো। কিন্তু এখনো এই কাজ এখনও শেষ হয়নি। জিতেন্দ্র তিওয়ারি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন, একটা সময় ছিল যখন কুলটির নেতারা শুধু পানীয়জল প্রকল্পের পাইপ দেখিয়ে ভোট চাইতেন। কিন্তু আমি যখন মেয়র নই, তখন আমি বলেছিলাম যে , শুধু পাইপ দেখিয়ে ভোট চাওয়া হলে চলবে না। এই পাইপ দিয়ে মানুষের ঘরে পানীয়জল সরবরাহ করতে হবে। তিনি বলেন, ১২টি ওএইচআর বা ওভারহেড রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে।

কুলটি এলাকায় পানীয়জলের চাহিদার ৭৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরুত ২ প্রকল্পে ২৫% কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো। কিন্তু তা এখনও করা হয়নি। তিনি বলেন, পুরনিগমের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমি যখন মেয়র ছিলাম, তখন একটা একটি নিয়ম করেছিলাম যে ঐ এলাকার বাড়িতে বসবাসকারী সকল মানুষকে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হবে। ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড বা ইসিএল ও বার্নপুর সেল আইএসপি বা ইস্কোর কারখানার আবাসনে বসবাসকারী মানুষদের জল সরবরাহ দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, তখন আমি বলেছিলাম যে বাড়িতে যারা আছেন তাদের জল সংযোগ দেওয়া হবে। বাড়িতে যারা আছেন তারা বৈধ নাকি অবৈধ তা দেখা ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড বা ইস্কোর কাজ। তবে বাড়িতে যারা আছেন তাদের জল সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমান আসানসোল পুরনিগমে বোর্ডে সেই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সের শর্ত রাখা হয়েছে।

ইস্কো এখন বলছে যে পুরনিগম তাদের এলাকায় নির্মিত বাড়িতে বসবাসকারী মানুষের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে, যদি হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের অনুমতি না দেওয়া হয় এবং নগর নিগম হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়া জল সরবরাহ না করে, তাহলে ইতিমধ্যেই সেই বাড়িগুলিতে যেসব বাসিন্দারা আছেন তারা পানীয়জল থেকে বঞ্চিত হবেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, একসময় অভিজিৎ আচার্য এই এলাকার জল প্রকল্পের কাজ তদারকি করতেন এবং তিনি বিভিন্ন দলের কাউন্সিলরদের সাহায্যে জল প্রকল্পের কাজ করছিলেন। কিন্তু এখন কোন কিছুই করা হচ্ছে না। এদিন প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি কার্যত হুমকির সুরে বলেন, কুলটি পুর এলাকাকে কেউ বা কারা যদি, আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে চুপ করে বসে থাকবো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *