KULTI-BARAKAR

খুনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি জলপাইগুড়িতে, ধৃতদের ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত

বেঙ্গল মিরর,কুলটি ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়ে বিবাদ। আর সেই কারণে জলপাইগুড়ি থেকে দাদাকে খুনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি। তারপর ভাড়া করা শুটার দিয়ে সেই ব্লুপ্রিন্ট মতো দাদাকে খুনের ছক কার্যকর করা। আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসে পুর কর্মীকে গুলি করে খুনের ঘটনায় তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এলো। এই খুনের ঘটনায় মূল চক্রী মৃত পুর কর্মীর খুড়তুতো বোন। সোমবার ফারহা নাজ নামে তুতো বোনকে জলপাইগুড়ি থেকে গ্রেফতার করে কুলটি থানার পুলিশ। একইসাথে গ্রেফতার করা হয়েছে তার গাড়ি চালক সৈয়দ সাজিদ আখতারকে। জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার পুলিশের সাহায্যে কুলটি থানার পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের কুলটিতে নিয়ে আসা হয়। শনিবার দুজনকে সাতদিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে আসানসোল আদালতেে পেশ করা হয়। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে চারদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গতঃ, ঘটনার দিন রাতেই কুলটি থানার পুলিশ এই খুনে জড়িত থাকার সন্দেহে ইন্তেখাব আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করে। সেই খুন হওয়া পুর কর্মী যে এলাকায় থাকেন, সেখানকারই বাসিন্দা। বর্তমানে সে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে আছে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে, এই ঘটনার তদন্তে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে আসে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ফরেনসিক দল। তারা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন এই মামলার আইও বা তদন্তকারী অফিসার।

জানা গেছে, মৃত সৈয়দ জাভেদ বারির বাবার জলপাইগুড়িতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৩২ কাঠা জমি আছে। সেই জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে এই খুনের ছক তৈরি করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে নিশ্চিত পুলিশ।উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে কুলটি থানার নিয়ামতপুরে রহমান পাড়ায় এই শুটআউটের ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, ঐদিন রাত সাড়ে নটা নাগাদ রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন পুর কর্মী সৈয়দ জাভেদ বারি। সেই সময় রাস্তার মোড়ে মোটরবাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলো দুই যুবক। পুর কর্মী জাভেদ বারি রাস্তার মোড় থেকে একটু এগোতেই তার পাশে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় মোটরবাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জমি বিবাদের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ খুন হওয়া পুর কর্মীর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করে কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ জানতে পারে, খুড়তুতো বোন ও ভাইদের সঙ্গেই এই জমি নিয়ে ঐ পুর কর্মীর বিবাদ চলছে। এরপরই তাদের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ইন্তেখাব আলমকে। তাকে জেরা করে, পুলিশ জলপাইগুড়িতে থাকা জাভেদের এক খুড়তুতো বোন ফারহা নাজের কথা জানতে পারে। পুলিশ এও জানতে পারে, জলপাইগুড়ির জমি নিয়েই পারিবারিক বিবাদ। যা নিয়ে একমাস আগে মৃতের এই খুড়তুতো বোন ও তার স্বামী আসিফ খান কুলটির নিয়ামতপুরে বাড়িতে এসে হামলাও চালিয়েছিল। জাভেদকে খুনের হুমকিও তারা দিয়েছিলো বলে অভিযোগ। পুলিশ জানতে পারে, এরপরই জলপাইগুড়িতে বসে জাভেদকে খুনের ছক তৈরি করে ফারহা নাজ । সেই মতো ভাড়া করা শুটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই শুটার মিলতেই ছক মতো খুন করায় ফারহা নাজ। পুলিশ মনে করছে, সবটাই হয়েছে মৃতের খুড়তুতো বোনের পরিকল্পনা মতো। শুক্রবার রাতে যে দুজন শুটার জাভেদকে গুলি করেছিলো, তাদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। এখনও এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফারহা নাজের স্বামী আসিফ খান ফেরার রয়েছে। পুলিশ তার খোঁজে চালাচ্ছে বলে এক আধিকারিক জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *