সেল আইএসপির আধুনিকীকরণ নিয়ে শাসক দলের মন্ত্রীকে আক্রমণ, ” নো এসআইআর, নো ইলেকশন ” হুঁশিয়ারী বিরোধী দলনেতার
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার সকালে উত্তরবঙ্গের সভা থেকে বাংলায় ” এসআইআর ” না করতে দেওয়ার পক্ষে জোর সওয়াল করেছেন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এদিন বিকেলে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্নপুরে দলের এক সভা থেকে সেই ” এসআইআর ” নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার সাফ হুঁশিয়ারী বাংলায় ” নো এসআইআর, নো ইলেকশন “। তার দাবি, বাংলায় এসআইআর হবেই। কেউ আটকাতে পারবেনা। আমরা ভুয়ো ভোটার দিয়ে কাউকে শাসন ক্ষমতায় থাকতে দেবোনা। বিহারে হলে বাংলায় হবে না, কেন? কিসের ভয়? বিহারে ৪৫ দিনে এসআইআর হয়েছে। বাংলায় ৫০ দিনে হবে। এর আগে ২০০২ সালে বাংলায় এসআইআর হয়েছিলো। এমন তো এই রাজ্যে প্রথমবার হচ্ছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন বার্নপুরের ত্রিবেণী মোড় সংলগ্ন ময়দানে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার ডাকে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। মুলতঃ বার্নপুর সেল আইএসপি বা ইস্কো কারখানার আধুনিকীকরণকে সামনে রেখে এই জনসভার ডাক দেওয়া হয়েছিলো।



এই সভায় রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য, আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি কুলটির বিধায়ক ডাঃ অজয় পোদ্দার সহ জেলার বিজেপি নেতা, কর্মী এবং সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিরোধী দলনেতা সেল আইএসপির আধুনিকীকরণ সম্পর্কে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই কারখানার আধুনিকীকরণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে চলেছে। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি যে সেল আইএসপির কিছু আধিকারিক রাজ্যের আইন ও মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং কারখানার ঠিকাদার সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ ইমতিয়াজের যোগসাজশে স্থানীয় মানুষদেরকে বঞ্চিত করছেন । সেল আইএসপিতে কেবল সেইসব মানুষই কাজের বরাত পান যাদেরকে সৈয়দ ইমতিয়াজ চান। কেবল তারাই টেন্ডার জমা দেন এবং কারা কাজ করবেন তার তালিকা মলয় ঘটক বা তার ভাই অভিজিৎ ঘটক ঠিক করেন। তিনি বলেন, সেল আইএসপি একটি নবরত্ন কোম্পানি।
বিজেপি এখানে এই ধরণের কোন ব্যবসা কেউ করুক, তা কখনও সহ্য করবে না। আমি এই বিষয়ে সেল আইএসপির ডিআইসির কাছে চিঠি লিখবো। আমি এদিন সভা শেষ করে ১০ জনের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলবো। তাদের বলবো যে এখানে যা কিছু কাজ করা হবে, তা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে করা হোক। আমরা কোন ফেভার চাইনা। চাই সবকিছু ফেয়ার হোক। তার স্পষ্ট কথা, আমি জানি কোন রোগের চিকিৎসা কোন ওষুধে হয়। আমি এদিন এখানে কেবল এই বিষয়গুলি তুলে ধরতে এসেছি। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আবারও এদিন রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ করে বলেন যে, টিএমসি নেতাদের সাথে যোগসাজশে এবং পুলিশ প্রশাসনের সরাসরি সহযোগিতায় বালি ও কয়লা মাফিয়ারা এখানকার পরিবেশের ক্ষতি করছে। প্রকৃতি মায়ের যা কিছু দান, সবকিছু লুঠ করা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন সবকিছু জেনেও এতে কোন কিছু করছে না।
সিবিআই ও ইডি সব চুরির তদন্ত করছে। কয়লা, গরু হয়েছে। এবার বালি। কেউ বাদ যাবে না। তিনি বাংলার মানুষদেরকে সিবিআই ও ইডির তদন্তের উপরে ভরসা রাখার আহ্বান জানান। ভোটার তালিকার স্পেশাল নিবিড় সমীক্ষা বা এসআইআর নিয়ে তিনি বলেন, কেউ এটা আটকাতে পারবে না। এটা হবেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই চেষ্টা করুন না কেন, পশ্চিমবঙ্গে এর বাস্তবায়ন থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে টিএমসি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। তবে বাংলার মানুষ, তারা হিন্দু হোক বা মুসলিম, ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে কোনও বাংলাদেশি মুসলিম বা রোহিঙ্গা মুসলিমের ভারতে কোনও স্থান নেই। এসআইআরের পরে, কেউ থাকবে না। এদিকে, বার্নপুর সেল আইএসপির আধুনিকীকরণ নিয়ে রাজ্যের বিরোধী নেতার বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের বার্নপুরের ৭৮ নং ওয়ার্ডের তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলর অশোক রুদ্র। তিনি বলেন, আমার কি করছি, তা বার্নপুরের মানুষেরা জানেন। আমরা এলাকার বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি দেওয়ার দাবি তুলেছি। কোন পতাকা না নিয়ে। আর উনি সভায় কি বলে গেলেন, সবাই তা শুনেছেন। শুধু বললেন, আধুনিকীকরণের কেন্দ্র সরকার কত টাকা দিয়েছেন। একবারও কি বললেন, এই এলাকার ছেলেমেয়েদের চাকরি দিতে হবে।