ASANSOL-BURNPUR

বার্নপুরের গ্রামে মহালয়ায় হয় একদিনের দূর্গাপুজো

বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* মহালয়ার আসল অর্থ হলো পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের শুরু, যা দেবী দুর্গার পৃথিবীতে আগমনের সূচনা করে। এই দিনে প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের আত্মার স্মরণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং একই সাথে দুর্গাপূজা উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। ‘ মহালয়া ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘মহান আলয় বা আশ্রয়’, এবং এখানে দেবী দুর্গাই সেই মহান আশ্রয়। এই বছরের রবিবার যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হলো মহালয়া। আর এই মহালয়ার দিনই পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্নপুরের ধেনুয়া গ্রামে একদিনের দুর্গাপুজো আয়োজন করা হয়। একদিনের এই পুজোর প্রতিমাও একবারে অন্যরকম। রয়েছে অনেক পুরনো রীতিও।

জানা গেছে, এই পুজো ১৯৭৯ সালে কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের হাত ধরে শুরু হয়েছিল। কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। একাধারে তিনি গ্রামের উন্নতির জন্য কাজ করতেন। তার বিশ্বাস ছিলো যে দুর্গাপুজো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কথিত আছে সাধক তেজানন্দ বম্ভ্রচারী প্রথম তার সাধনা বলে মায়ের এই মূর্ত রূপ অবলোকন করেছিলেন।পরে, কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুর গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনা করে মহালয়ার দিনে একদিনের দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি নিজেই পুজোর সমস্ত আয়োজন করতেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, একটি ছোট মন্দির তৈরি করেন। তিনি নিজেই মূর্তি তৈরি করার পাশাপাশি পুজোর আচার-অনুষ্ঠান তার পরিচালনাতেই হতো।কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের মৃত্যুর পর, তার ছেলে তরুণ সরস্বতী ঠাকুর পরে এই পুজোর দায়িত্ব নেন। তিনি তার পিতার আদর্শ অনুসরণ করে পুজোকে আরও সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী করে তোলেন। আজ ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো একটি ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই প্রচুর মানুষেরা এই পুজো দেখতে ধেনুয়া গ্রামে আসেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে।মহালয়ার দিনে হওয়া একদিনের এই পুজোতে একটি মন্দিরে মায়ের একচালা মূর্তি থাকে । এই অনন্য দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার কুমারী রূপ গৌরী মহামায়ার পূজো করা হয়। এখানে মায়ের সাথে তার পরিবারে কোন সদস্য থাকে না। যেমন প্রচলিত পুজোয় দেখা যায়। মা দূর্গার সঙ্গে তার দুই ছেলেমেয়ে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী ও সরস্বতীর সঙ্গে তাদের বাহনেরা থাকেন। সেখানে ধেনুয়ার গ্রামের একদিনের পুজোয় মা দুর্গার সঙ্গে তার দুপাশে দুই সখি জয়া ও বিজয়া থাকেন।

এই পুজোর প্রতিমা স্থানীয় শিল্পীরাই তৈরি করেন। আর পুজোয় গ্রামের সাধারণ মানুষেরা পুজোর আয়োজনে থাকেন ।রবিবার সকালে ধেনুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, মহালয়াতেই আকাশে বাতাসে পুজোর গন্ধ। গ্রামের কচিকাঁচারা নতুন ধুতি ও গেঞ্জি পড়ে গ্রামের মহিলা ও পুরুষদের সঙ্গে পুকুরে যায়। এরপর একদিনেই দেবীর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো হয়। প্রতি বছরের মতো এবারেও আসানসোল বার্নপুর সহ পাশের বাঁকুড়া জেলারও প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটেছিলো। থাকে পুজো দেখতে আসা ভক্তদের মাঝে ভোগ বিতরণের ব‍্যবস্থা।কালিকৃষ্ণ যোগাশ্রম গৌরী কেদারনাথ মন্দির কমিটির পুরোহিত নারায়ণ দত্ত বলেন যে যোগাশ্রম ১৯৭৯ সাল থেকে নিয়মিত একদিনের দুর্গা পূজো হয়ে আসছে। একদিনের পূজোয় দশমীর শেষে কেবল মাত্র কলা বউ বিসর্জন দেওয়া হয়। দুর্গাপূজোর সময় মন্দির যাতে খালি না থাকে তার জন্য, একাদশীতে এই পুজোর দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এখানে অনন্য দুর্গা পূজা দেবীপক্ষের সময় দেবী দুর্গার বিদায় নয়, বরং তার অব্যাহত উপস্থিতির প্রতীক। এই বছরে একদিনের দুর্গা পূজোয় মহিলা ঢাকিদের ঢাক বাজানো ছিল একটি প্রধান আকর্ষণ।দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে চলে আসা বার্নপুরের গ্রামের এই পুজো দুর্গাপূজোর এক সপ্তাহ আগেই আসানসোলে শারদোৎসবের একটা আমেজ এনে দেয়।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *