আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে এই প্রথমবার দুর্গা পূজা হচ্ছে
প্রধানত জেল সুপারের উদ্যোগে প্রতিমা দিয়ে- আলপনা দিয়ে সাজাচ্ছেন মহিলা আবাসিকরা
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল : আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগার বা এখানকার জেলের ইতিহাসে এ বারই প্রথম জেলের ভিতর দুর্গা পুজো হচ্ছে । এতে জেলের আবাসিকরা অত্যন্ত খুশি। সমস্ত ধর্ম ,বর্ণ, সম্প্রদায়ের বন্দিরা একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে পূজোর আয়োজনে জেল প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ।বর্তমান জেল সুপার চান্দ্রেয়ী হাইত এই সময়কে বলেন আমার চাকরি জীবনের আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখান থেকেই সোজা জীবনে প্রথম চাকরির পোস্টিং আসানসোলের এই বিশেষ জেলে । এখানে এসেই বন্দিদের জন্য যেমন পাঠাগারের ব্যবস্থা করেছি, তেমনি তাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ চালু আছে।



জেলে থাকা আবাসিকরা আমার কাছে আবেদন করেছিলেন ছোট করে হলেও একটা পুজোর ব্যবস্থা যদি করা যায় । আমারও মনে হয়েছিল অন্যান্য অনেক জেল আছে যেখানে দুর্গাপুজো হয়। তাহলে এখানে সরকারি নিয়ম এবং সুরক্ষা মেনে যদি পুজো করতে পারি ।সেই মতো আবেদন করি আমাদের রাজ্য প্রশাসনের কাছে এবং কারাগার দপ্তর থেকে অনুমতি পাই। বিদ্যুৎ দপ্তর এবং দমকল দপ্তরকে জানিয়ে অনুমতি নেয়া হয়েছে।এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে চাকরি জীবনের এটাই প্রথম পোস্টিং এবং সমস্ত নিয়ম মেনে এক চালের সাবেকি প্রতিমা দিয়ে পুজো হচ্ছে। পঞ্চমীর দিন অর্থাৎ শনিবার আসানসোলের কুমারটুলি থেকেই আমাদের এক চালের প্রতিমা এসে পৌঁছবে। পুজোয় সবারই নতুন জামা কাপড় পড়ার ইচ্ছে থাকে। মহিলাদের জন্য সরকারিভাবেই নতুন শাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।এছাড়াও পূজোর সাথে জড়িত কর্মীদেরও নতুন বসন দেয়া যায় তার চেষ্টাও হচ্ছে। কে পুরোহিত হবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জেল সুপার বলেন পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবেন জেলের ভিতর থাকা একজন আসামী । আর তাকে সহযোগিতা করবেন পুজোর ক্ষেত্রে আমাদের একাধিক কর্মী। ইতিমধ্যেই মহিলা বন্দিরা যেখানে পুজো হবে সেখানে আলপনাও দিয়েছেন ।ওরা অত্যন্ত খুশি।
তাছাড়াও দশমীর দিন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে যেখানে আবাসিক রা সংগীত ,নৃত্য ,আবৃত্তিতে অংশ নেবেন। এই মুহূর্তে এখানে বন্দীর সংখ্যা ৪০০ র কিছু বেশি। তার মধ্যে প্রায় ৩৫ জন মহিলা ছাড়া সাজা প্রাপ্ত ডজন খানেক বন্দি আছেন । তাদের মধ্যে যারা ৮-১০ বছর ধরে আছেন তারাই জেল সুপারকে জানিয়েছেন অতীতে কখনো এখানে দুর্গা পূজা হয়নি। তারা নিজেরা হয়তো একটু চেষ্টাও করেছিলেন। এবারও একাধিক বন্দি পুজোর জন্য আবেদন করেছিলেন বলে জেল সুপার জানান ।বাইরে থেকে কি ঢাকি আনা হবে? এর উত্তরে তিনি বলেন নিরাপত্তার কারণেই কোন ঢাকি বাইরে থেকে আসবেনা। তবে ঢাকের ক্ষেত্রে আলাদা মিউজিক ব্যবহার করা হবে। আমাদের দপ্তর থেকে এজন্য কিছুটা আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি।
তিনি জানান পুজোর সময় প্রত্যেক দিন বিশেষ খাবারের মেনু থাকছে। নবমী এবং দশমীতে মাংস, সপ্তমীতে মাছ, অষ্টমীতে পনির সহ নিরামিষ । প্রতিদিন আলাদা করে মিষ্টি এবং টিফিনের ক্ষেত্রেও একটু আলাদা ব্যবস্থা। ঠাকুরের চিরে দই ,নাড়ু থাকবেই। জেল সুপার বলেন আমরা কর্মীরা সবাই মিলে ওদের সঙ্গে একসাথে পুজোর কটা দিন আনন্দ করবো। জেলের ভেতরে থেকেও যাতে ওরা বুঝতে পারেন উৎসব সবার জন্য সবাই মিলে সেই চেষ্টাটুকু করা হচ্ছে।