DURGAPUR

দুর্গাপুরে গণধর্ষণের ঘটনা : গ্রেফতার তিন, ফেরার দুই, ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি

বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো। শুক্রবার রাতের এই ঘটনার পরে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। শনিবার সকাল থেকে তদন্তে নেমে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকড়াও করে ৩ জনকে। ফোনের সূত্র ধরে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা এলাকারই বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে খবর জানা গেছে। ধৃত তিনজনকে রবিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে। তাদের হেফাজতে নিতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই গণধর্ষণের ঘটনা সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৫ জন। বাকি দুই অভিযুক্তর খোঁজে কলেজ সংলগ্ন ১ কিলোমিটার দূরে পরাণগঞ্জ কালিবাড়ি শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এর পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকদের একটি দল। পুলিশের এক আধিকারিক এদিন বলেন, বাকি দুজনকে দ্রুত পাকড়াও করা হবে। তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।

এদিকে, আরো জানা গেছে, কলেজ ক্যাম্পাসের সিসিটিভির ফুটেজ থেকে মিলেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে, দুর্গাপুরের ঐ বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা নির্যাতিতা ঐ ডাক্তারি পড়ুয়া। শনিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের ঐ হাসপাতালে এসে পড়ুয়ার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য ডাঃ অর্চনা মজুমদার। পরে তিনি জানিয়েছিলেন, পুলিশ এই ঘটনার কি তদন্ত করা দুর্গাপুরের মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রঞ্জনা রায় কথা বলেন তার সঙ্গে।

পরে তিনি বলেন, দুর্গাপুরের মতো শহরে এই ঘটনা ঘটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক। সে আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের তরফে সবরকম সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আশা করি সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে ও এই কলেজে পড়াশোনা করবে। তবে সে এই মুহুর্তে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এর পাশাপাশি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপির সামনে শনিবার গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন ঐ ডাক্তারি পড়ুয়া। শুক্রবার রাতে কলেজ থেকে বাইরে বেরোনোর পরে, তার সঙ্গে ঠিক কি ঘটেছিল, তার বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়া। শনিবার রাতে নির্যাতিতাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। জানা গেছে, রবিবার দুর্গাপুরে আসছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের একটি দল।

এদিন দুর্গাপুরে আসছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম ও অভয়া মঞ্চের একটা দলও।প্রসঙ্গতঃ, গনধর্ষনের এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত আটটার পরে। দুর্গাপুরের শোভাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া তরুণী কলেজের হস্টেলে থাকেন ।ঠিক কি ঘটেছিলো শুক্রবার রাতে। জানা গেছে, রাত আটটা নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে খাবার খেতে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিল ডাক্তারি পড়ুয়া। অভিযোগ, সেই সময় কলেজের অদূরে রাস্তায় তিনজন তাদের পিছু ধাওয়া করে। পরে তারা তাদের আটকায়। সেই সময় সহপাঠী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঐ তিনজন এরপর পড়ুয়াকে একা পেয়ে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে গণধর্ষণ করে। পরে সেখানে আরো দুজন আসে।

এরপরে পড়ুয়ার ফোন কেড়ে নিয়ে কলেজে চলে যাওয়া সহপাঠীকে ডেকে আনা হয়। সে এলে তাকে দিয়ে পড়ুয়াকে কলেজে পাঠানো হয়। কলেজে ফিরে ডাক্তারি পড়ুয়া কতৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানান। পরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ মেয়ের এক সহপাঠী আমাকে ফোন করে গোটা ঘটনাটি বলে। আমি দুর্গাপুরে চলে আসি । এসে জানতে পারি, রাত আটটা নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে খাবার খেতে আমার মেয়ে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলো। তখন রাস্তায় তিন জন আসে। সহপাঠী আমার মেয়েকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তারা ৩ হাজার টাকা দাবি করে। সে তা দিতে পারেনি। পরে আবার মেয়ের সহপাঠী ঘটনাস্থলে ফিরে যায়। সেই সময় সেখানে ৫ জন যুবক ছিল। পরাণগঞ্জ কালবাড়ি শ্মশান লাগোয়া জঙ্গল থেকে ঐ বেসরকারি কলেজের দূরত্ব মাত্র মেরেকেটে ১ কিলোমিটার। সেখানে কিভাবে এমন ঘটনা ঘটলো, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উঠছে নানা প্রশ্ন। ঐ ডাক্তারি পড়ুয়ার সহপাঠীর ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তাকে বেশ কয়েকবার জেরা করা হয়েছে।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *