ASANSOL

আসানসোলের বালি ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে তল্লাশি, উদ্ধার লক্ষ – লক্ষ টাকা ?

কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম সহ একাধিক জায়গায় একযোগে ইডির হানা, সন্ধ্যায় বেরোলো আধিকারিকদের চারটি গাড়ি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* আসানসোলে বালি ব্যবসায়ীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির অভিযান। বৃহস্পতিবার সাতসকালেই আসানসোল দক্ষিণ থানার জিটি রোডের মুর্গাশোলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সীতারাম বাগারিয়ার বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি অভিযানে আসে। মুলতঃ ঐ ব্যবসায়ীর ভাইপো মনীষ বাগারিয়া বালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তার খোঁজ করতেই ইডির এই অভিযান। পরে জানা যায়, মনীষ বাড়িতে নেই। তিনি কলকাতায় আছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই অভিযানে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ছে। এই অভিযান নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। কারা এসেছে এই অভিযানে ? শেষ পর্যন্ত জানা যায়, কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি ঐ ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযানে এসেছে। ব্যবসায়ীর বাড়ির পাশাপাশি আসানসোলের জিটি রোডের ভাঙাপাঁচিল এলাকায় তার একটি শোরুম, অফিস ও কারখানাতেও ইডির আধিকারিকরা যান। এদিকে, জানা ইডির এই অভিযানে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে নগদ ৩৪ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। যা, ইডির আধিকারিকরা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছেন। তবে, এই ব্যাপারে ইডির তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ঘড়ির কাঁটায় তখন ছটা বেজেছে। বাগাড়িয়া পরিবারের সদস্যরা সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। এর ঠিক কিছু সময় পরেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির দল তাদের বাড়িতে পৌঁছায়। জানা গেছে যে, ঐ দলে ২০ জনের মতো আছেন। চারটি গাড়িতে এই দলটি আসে। ১০/১২ ইডির আধিকারিকের সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তারা প্রথমে বাগাড়িয়া পরিবারের সব সদস্যর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে। তারপর জেরা ও তল্লাশি শুরু হয়। আরো চারটি গাড়ি করে আরো একটি দল শোরুমে আসেন। সেখানে পরে টাকা গোনবার মেশিন নিয়ে আসা হয় বলে জানা যায়।

আসানসোল চেম্বার্স অফ কমার্সের সম্পাদক শম্ভুনাথ ঝা এদিন সকালে খবর পেয়ে সীতারাম বাগারিয়ার বাড়িতে যান। কিন্তু তাঁকে ঐ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। পরে শম্ভুনাথবাবু বলেন, চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য বাগারিয়ার বাড়িতে ইডি অভিযান চালাচ্ছে। তবে কেন এই অভিযান জানি না। আমরা বাগারিয়া পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।প্রসঙ্গতঃ, বালি ব্যবসায়ী মনীষের কাকা ওম বাগারিয়া আসানসোল চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি। আসানসোলের বাসিন্দা এই বাগারিয়া পরিবারের একাধিক ব্যবসা আছে।

ইডি বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে , মনীষ গত তিন বছর ধরে বালির ব্যবসা করছে। তার আরো কয়েকজন পার্টনারও আছে। তারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বালির ঘাট চালান। সেগুলো সরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে পাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি তারা ঐসব ঘাট থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে বড় ধরনের মুনাফা পায়। যার থেকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন আছে। এছাড়াও এই বালি কারবারের সঙ্গে একটা সিন্ডিকেট আছে। এই বালি কারবার চালানোর জন্য এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কাছে টাকা পাঠানো হয়। এছাড়াও এই মনীষের বিরুদ্ধে বালি নিয়ে যাওয়ার চালান জাল করে জিএসটি ফাঁকি দেওয়ারও একটা অভিযোগ কাছে জমা পড়েছে। এর পাশাপাশি বালি পাচারের টাকা হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো বলে ইডির কাছে খবর আছে। মনে করা হচ্ছে, এই কারণেই আসানসোলে এই বালি কারবারির বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই অভিযান।প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে অভিযানের পরে অবশেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ইডির আধিকারিকরা বাগারিয়াদের বাড়ি থেকে বেরোন। যে চারটি গাড়ি নিয়ে তারা এদিন সকাল ছটা নাগাদ মুর্গাশোলে ব্যবসায়ীর বাড়িতে এসেছিলেন, সেগুলি নিয়েই তারা বেরিয়ে যান। তবে, কি পাওয়া গেছে, তা ইডির আধিকারিকরা বলতে চাননি।

ঐ ব্যবসায়ীর বাড়ির সদস্যদেরও এই ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। আসানসোলের পাশাপাশি কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও লালগড়ে বালি খাদান ও এই কারবার চালানো একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসেও একইসাথে এদিন সকাল চলছে ইডির অভিযান। প্রসঙ্গতঃ, গত ৮ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রামে বালি কারবারি সৌরভ রায়ের বাড়িতে ইডি অভিযান চালিয়েছিলো। সেই অভিযানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ইডি পেয়েছিলো। এদিনও সেই সৌরভ রায়ের বালি খাদানের অফিস ও বাড়িতে ইডি অভিযান চালায়। আগের অভিযানে পাওয়া নথি যাচাই করতেই এদিনের এই হানা বলে জানা গেছে। আরো জানা গেছে, এই ব্যাপারে ইডি একটি এফআইআরও করেছে। তাতে সৌরভ রায়, মনীষ বাগারিয়া, আরো এক ব্যবসায়ী ও এক চার্টার্ড একাউটেন্টের নাম বলে ইডি সূত্রে খবর।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *