দুর্গাপুর ধর্ষণ কান্ড, তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড়, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুজনের গোপন জবানবন্দি
বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। এই ঘটনায় ধৃত ছজনের মধ্যে দুজন, শেখ রিয়াজউদ্দিন ও সফিক শেখকে মঙ্গলবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়ে। পুলিশ, আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, এই দুজন এদিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিএনএস ১৮৩ নং ধারায় গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। বলা যেতে পারে, তাদের দেওয়া স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বিচারক তাদেরকে ৫ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর আগে গত রবিবার হঠাইৎ এই দুজনকে পেশ করা হয়েছিলো দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে।



গোটা রাজ্য জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় মোট ছজনকে তদন্তে গ্রেফতার করেছে নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ।এর আগে প্রথম দফা পুলিশ হেফাজত শেষ হওয়ার পরে ৬ জনকে আদালতে পেশ করা হলে, বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদেরকে ২২ অক্টোবর বুধবার হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু, তার আগেই হঠাৎ করে ধৃতদের মধ্যে দুজনকে কেন পেশ করা হলো আদালতে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। রবিবার আদালতে পেশ করার পরে বিচারক রিয়াজউদ্দিন ও সফিককে জেল হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদেরকে ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতে হাজির করানোর কথা বলা হয়। সেইমতো এদিন তাদেরকে আদালতে পেশ করা হয়েছিলো। এদিন এই প্রসঙ্গে ধৃতদের পক্ষে এসডিএলএসের আইনজীবী পুজা কূর্মী এদিন বলেন, রিয়াজুদ্দিন ও শফিক শেখের স্টেটমেন্ট এদিন রেকর্ড করা হয়েছে।
বিএনএসের ১৮৩ নং ধারায় এটা করা হয়েছে। একটি সূত্রের খবর, এখনো পর্যন্ত হওয়া পুলিশের তদন্তে রিয়াজুদ্দিন ও সফিকের বিরুদ্ধে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তাই তাদেরকে এই মামলায় সাক্ষী করতে চলেছে পুলিশ । তার জন্যই তাদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যে মেডিক্যাল কলেজে তিনি পড়েন, সেখানেই আলাদা একটি জায়গায় পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাকে। মনে করা হচ্ছে, ডাক্তারি পড়ুয়াকে দিয়ে ধৃতদের টিআই প্যারেড করানো হবে।গত ১০ অক্টোবর রাত আটটা নাগাদ দুর্গাপুরের শোভাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কলেজের থেকে খাবার খেতে কলেজেরই সহপাঠী দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া সঙ্গে বেরিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া। নির্যাতিতাকে ঐ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়।
প্রথমে এই ঘটনাটিকে গণধর্ষণ বলা হয়। কিন্তু পরে নির্যাতিতার বয়ানে ও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, একজনই তাকে ধর্ষণ করেছে। যা, সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন আসানসোল দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমে দুদিনের মধ্যে দুর্গাপুর নগর নিগমের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজড়া গ্রাম থেকে শেখ রিয়াজউদ্দিন, সফিক শেখ, অপু বাউড়ি, শেখ ফিরদৌস ও শেখ নাসিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সহপাঠী মালদহের বাসিন্দা ওয়াসিফ আলিকে গ্রেফতার করা হয়। এদিন আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্টেটমেন্ট দেওয়া রিয়াজউদ্দিন ও সফিক এই ঘটনার মামলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে চলেছে। সেদিন রাতে জঙ্গলে নির্যাতিতার সঙ্গে ঠিক কি হয়েছিলো, তা এই দুজনের জবানবন্দি থেকে পাওয়া গেছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, আস্তে আস্তে এই ঘটনার সবকিছু বেরিয়ে আসছে।