DURGAPUR

দুর্গাপুর গণধর্ষণ কান্ড : মামলা এডিজে কোর্টে, চার্জশিট পেশের পরের দিন আদালতে ধৃত ৬, জামিন নাকচ দুজনের

বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে চার্জশিট জমা হওয়ার ঠিক পরের দিন শুক্রবার ধৃত ৬ জনকে আবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। এদিন শেখ সফিক ও শেখ রিয়াজউদ্দিনের তরফে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করে। স্পেশাল সরকারি আইনজীবী বা পিপি বিভাষ চট্টোপাধ্যায় তার বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত বিচারক দুজনের খারিজ করে দেন। এদিন ৬ জনেরই ১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর পাশাপাশি এদিন বিচারক ( এসিজিএম) এই মামলাটি এডিজে ( ফাস্ট) কোর্টে স্থানান্তর করে দেন। এদিন দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বিচারকের কাছে সওয়াল করেন, এই ঘটনার পেছনে কি কারণ রয়েছে সেইসব কিছু ও সিসিটিভি ফুটেজ পেনড্রাইভের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে। চার্জশিটের কপি সহ এইসব তথ্য ধৃতদের আইনজীবীকে দেওয়া হয়েছে।

এরপরেই লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের আইনজীবী পুজা কূর্মী সাওয়াল করেন, তিন জন প্রথমে নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। নির্যাতন চালানোর পর মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়েছিল। তারা চলে যাওয়ার পর শেখ রিয়াজউদ্দিন ও সফিক শেখ এসেছিল। তারা ২০০ টাকা ছিনতাই করেছিল এবং তাদের ফোন থেকে ছিনতাই যাওয়া নির্যাতিতার ফোনে ফোন করেছিল। যেহেতু তারা ফোন করেছিল সেজন্য তাদের বিরুদ্ধেও একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে। তাই তাদের জামিন দেওয়া হোক। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় অতিরিক্ত দায়রা আদালতে পরবর্তী মামলার শুনানি হবে।

পরে সরকারি আইনজীবী বিভাষ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমরা সমস্ত তথ্য চার্জশিটের মাধ্যমে বিচারকের কাছে পেশ করেছি। শুক্রবার কমিটমেন্ট হয়েছে। শনিবার সকালে এডিজে বা অতিরিক্ত দায়রা আদালতে পরবর্তী শুনানি হবে। এদিন এমনই নির্দেশ বিচারক দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন এই মামলার দ্রুত যাতে বিচার হয় সেই দিকে নজর রেখে আইও বা তদন্তকারী অফিসার আদালতে আবেদন করেছেন। অভিযুক্তদের তরফে তাদের আইনজীবিরা অভিযোগ করেন যে, ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো আসেনি। তাও চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী বলেন, এমনটা হতেই পারে। এইসব পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরী হয়। রিপোর্ট পেলে আইও সাপ্লিমেন্টারী চার্জশিট জমা দেবেন। তর অপশন আছে। প্রসঙ্গতঃ, বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের মামলায় ২০ দিনের মধ্যে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় ধৃত অভিযুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধেই দুর্গাপুরের নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে।

এই ঘটনাটি ঘটেছিলো গত ১০ অক্টোবর রাতে। পরের দিন ১১ অক্টোবর এই ঘটনার মামলা হয় ও পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অর্থাৎ ২০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে মোট ১৮ টি সেকশানে এই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতার সহপাঠী (ওয়াসেফ আলি) বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ধর্ষণের ধারা বা সেকশানের উল্লেখ রয়েছে এই চার্জশিটে মামলা। বাকি ৫ জনের মধ্যে অপু বাউরি,শেখ নাসিরউদ্দিন ও শেখ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, তোলাবাজি ও ডাকাতির ধারা দেওয়া হয়েছে। শেখ রিয়াজউদ্দিন ও সফিক শেখের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ধারা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই মামলায় উল্লেখযোগ্য ধারা গুলি হলো ৭(১), ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৬ ও ৭৯। এই ক্ষেত্রে যাতে কাস্টডি ট্রায়াল হয়, তারজন্য সরকারের তরফে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, চার্জশিট জমা পড়ার দুমাসের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হয়ে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করা হবে বলে স্পেশাল পিপি বিভাস চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন। এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর দুর্গাপুরে আদালতে এই মামলার টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন বা টিআই প্যারেডের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিলো পুলিশের তরফে। তার ভিত্তিতে জানা যায়, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ কান্ডে মূল অভিযুক্ত। সে সরাসরি ধর্ষণকারী। বাকি পাঁচজন অভিযুক্তও কোন না কোনোভাবে এই ঘটনায় জড়িত। তাই তারা সমান দোষী। ঘটনার সূত্রপাত, গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার রাতে আটটা নাগাদ। সেই সময় দুর্গাপুরের শোভাপুরে আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ২৩ বছর বয়সী ডাক্তারি পড়ুয়া তার সহপাঠী ওয়াসিফ আলির সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। তারা যখন কলেজ ক্যাম্পাসের কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন সেই সময় সেখান থেকে প্রথমে তিনজন যুবক ঐ ডাক্তারি পড়ুয়াকে পরাণগঞ্জ জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায়। সেই সময় তার সহপাঠী সেখান থেকে কলেজে চলে আসে। এরপরে সেখান আরো দুজন যুবক আসে। বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়ার ফোন থেকে ঐ যুবকেরা তার সহপাঠীকে আবার সেখানে ডেকে পাঠায়। সহপাঠী সেখানে গেলে ঐ যুবকেরা তাকে দিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়াকে কলেজে পাঠিয়ে দেয়। কলেজে আসার বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়া কলেজ কতৃপক্ষকে জানান, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়তে। ডাক্তারি পড়ুয়া উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা নির্যাতিতাকে ঐ কলেজের হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর শনিবার সকালে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে। ঘটনার দুদিনের মধ্যে একে একে এলাকারই বিজরা গ্রামের বাসিন্দা ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতিতার সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, সে ঘটনার সময় তাকে রক্ষা করার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। পরে পুলিশ সহপাঠীকেও গ্রেফতার করে। তাকে এই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়। গত সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে ছয় ধৃতকে পেশ করা হয়। জামিন নাকচ হওয়ায় তারা আপাততঃ জেল হেফাজতে রয়েছে। বিচারক শুভ্রকান্তি ধরের কাছে পুলিশের জমা দেওয়া টিআই প্যারাডের রিপোর্ট অনুসারে, নির্যাতিতা পাঁচজনকেই সঠিকভাবে শনাক্ত করেছেন। যার মধ্যে ফিরদৌস শেখ মুল অভিযুক্ত। তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি আছে এই ঘটনায়। আরো বলা হয়েছে, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ ঘটনার মূল অভিযুক্ত। সেই করেছে ধর্ষণ। বাকি পাঁচজনও কোনো না কোনোভাবে যুক্ত এই ধর্ষণের ঘটনায়। ফিরদৌস ধর্ষণ করলেও, বাকিরা যুক্ত থাকায় এটি গণধর্ষণের সমান। পুলিশের তদন্তে সহপাঠীর ভূমিকা সন্দেহজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।প্রসঙ্গতঃ, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা পুলিশের পাহারায় উড়িষ্যার জলেশ্বরে তার বাড়ি ফিরে গেছেন।এখন দেখার, রাজ্যে শোরগোল ফেলে দেওয়া এই ঘটনার ট্রায়াল কতদিন শেষ হয় ও বিচারে দোষীরা সাজা পায়।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *