অবৈধ কয়লা পাচার মামলায় ইডির তৎপরতা, উদ্ধার টাকা ও গয়না
আসানসোল, দুর্গাপুর সহ বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের ৪০ টিরও বেশি জায়গায় অভিযান
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়:* অবৈধ কয়লা খনন, চোরাচালান এবং সেই কারবারে টাকা পাচারের ঘটনায় শুক্রবার সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড একযোগে অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। এই অভিযান কয়লা মাফিয়া ও কারবারিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এদিন সকাল থেকে আসানসোল ও দুর্গাপুরেও ইডি অভিযান চলছে। একসঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে রানিগঞ্জ, পান্ডবেশ্বর, পুরুলিয়া, হাওড়া ও কলকাতায়। জানা গেছে, রাজ্যের ২৪ টি জায়গায় এবং ঝাড়খণ্ডের ১৮ টি জায়গায় চলছে ইডি অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে এক কয়লা ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কোটি টাকারও বেশি নগদ ও প্রচুর গয়না উদ্ধার করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গেছে।













এদিন ভোরবেলা থেকে যাদের বাড়ি ও অফিসে ইডি অভিযান চালায়, তাদের মধ্যে আছে কয়লা ব্যবসায়ী নারায়ণ খড়কা, লালবাবু সিং ওরফে এল.বি. সিং, তার ভাই কুম্ভনাথ সিং, অনিল গোয়েল, শ্যাম সুন্দর ভালোটিয়া, সুশান্ত গোস্বামী, যুধিষ্ঠির ঘোষ, নারায়ণ নন্দ । কলকাতার সল্টলেক এবং ধানবাদে নারায়ণ খড়কার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। এল.বি. সিং ও তার ভাই কুম্ভনাথ সিং একটা কয়লা আউটসোর্সিং কোম্পানির মালিক।
এই কোম্পানির সঙ্গে ভারত কোকিং কোল লিমিটেড বা বিসিসিএলের কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের চুক্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, প্রায় দশ বছর আগে, সিবিআই এবং ইডি বিসিসিএলে টেন্ডার অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে এল.বি. সিংয়ের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল। সেই সময় এল.বি. সিংয়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোঁড়ার অভিযোগও আনা হয়েছিল। প্রসঙ্গতঃ, ২০২৩ সালে নারায়ণ খড়কার প্রাঙ্গণেও ইডি তল্লাশি চালিয়েছিল।এদিকে, দুর্গাপুরের বিধান নগরের শালানপুরিয়া আবাসনে এদিন ভোরবেলা থেকে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। সেখানে ইডির আধিকারিকদের সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।সূত্রের খবর, সুশান্ত গোস্বামীর একটি আবাসন রয়েছে সেখানেই চলছে এই অভিযান।
এই সুশান্ত গোস্বামী কয়লা পাচার বা কয়লা সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত থাকতে পারে। সুশান্ত গোস্বামী কয়লা মাফিয়া নারায়ণ খড়কার অফিসে কাজ করে কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে ইডি আধিকারিকরা।আসানসোল মহকুমার কুলটি থানার চৌরঙ্গী ফাঁড়ি এলাকার ডুবুরদিহি চেকপোস্টের কাছে পার্কিং লটের কাছে একটি কয়লা সিন্ডিকেটের অফিস রয়েছে। সেই অফিসেও অভিযান চালানো হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহ ইডি আধিকারিকরা এদিন সকাল থেকেই সেই অফিসে ছিলেন। অফিসের সমস্ত কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি, আর্থিক লেনদেন এবং ডিজিটাল প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বাড়ি এবং অফিসেও অভিযান চলছে।
এদিকে, ইডির অন্য একটি দল এদিন সকালে দুর্গাপুরের পাণ্ডবেশ্বর এলাকায়ও তল্লাশি শুরু করেছে। পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি গ্রামের ডোনা পাড়ায় যুধিষ্ঠির ঘোষের বাড়িতে ভোর ৫টা থেকে অভিযান চলছে। বাড়ির বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মোতায়েন রয়েছে।সূত্রের খবর, যুধিষ্ঠির ঘোষ আগে অবৈধ কয়লা ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত একটি মামলায় জেল খেটেছেন। বর্তমানে সে জামিনে আছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে তিনি অজয় নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন এবং পাচারের সাথে জড়িত। এলাকায় জল্পনা চলছে যে এদিনের এই ইডির এই অভিযান কয়লার হলেও, এর সঙ্গে কি বালির কারবারের কোনভাবে যোগ থাকতে পারে। কলকাতাতেও বেশ কয়েকটি জায়গায় এই সূত্রে ইডির অভিযান চলছে। পুরুলিয়ায় একটি কারখানায় ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ইডির একটা দল অভিযানে আসে। জানা গেছে, কোক কয়লা তৈরি করা হয় এই কারখানায়। সেখানে কাঁচা কয়লা পোড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, এদিনের এই অভিযান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে (পিএমএলএ) চলা মামলার তদন্তের একটা অংশ। অবৈধ খনন এবং কালো টাকা পাচারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য নথি এবং ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিকেল পাঁচটার শেষ খবর, সব জায়গাতে ১০ ঘন্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও ইডির তল্লাশি অভিযান চলছে।

